থানায় অভিযোগ
ভুল কীটনাশক প্রয়োগে চাষির দেড় বিঘা বেগুন ক্ষেত নষ্ট
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সার দোকান থেকে বালাইনাশক ওষুধ কেনার পর স্প্রে করায় প্রায় দেড় বিঘা জমির বেগুন ক্ষেত নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন রবিউল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী চাষি। তার অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ী তাকে ভুল কীটনাশক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বর্গা নেয়া দেড় বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আসছিলেন। চলতি সময়ে ওই ক্ষেতে দেশীয় উন্নতজাতের বেগুনের চারা রোপণ করেছিলেন। বেগুন ক্ষেতে সাদা মাছির আক্রমণ দেখে স্থানীয় চৌরাস্তা বাজারের ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’ থেকে বালাইনাশক কিনতে যান। কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন পোকা দমনে হেকেম কোম্পানির ‘তড়িৎ ৮০’ নামের একটি কীটনাশক ওষুধ দিয়ে স্প্রে করতে বলেন। সে অনুযায়ী রবিউল ইসলাম গত ২৬ জুন বিকালে ক্ষেতে স্প্রে করার পর তার পরের দিন সকালে ক্ষেতের বেগুন গাছ ঝিমিয়ে পড়তে দেখতে পান।
সেখান থেকে দ্রুত বাজারে এসে ঘটনাটি সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী জয়নালকে জানালে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী চাষি। ক্ষতিগ্রস্ত রবিউল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে তিনি প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে দেশীয় উন্নত জাতের বেগুনগাছ লাগিয়েছেন। ক্ষেতে ভালো ফলন ধরতে দেখে আশায় বুক বাঁধছিলেন।
এজন্য পাইকারদের কাছ থেকে বেগুন বিক্রি করার জন্য টাকা নিয়েছিলেন। ক্ষেতে পোকা দমন করতে গিয়ে ‘তড়িৎ’নামক ওষুধ স্প্রে করার পর ক্ষেতের বেগুনগাছ ঝিমিয়ে পড়ে মরে যাচ্ছে। এতে তার প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এনজিওর ঋণ কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। তবে ‘তড়িৎ’ কীটনাশকে বেগুন ক্ষেত নষ্ট হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জয়নাল আবেদিন।
তিনি বলেন, আমাদের ওষুধ দিয়ে ক্ষেতে এতবড় ক্ষতি হয়নি।
সম্ভবত অন্য কোনো কারণে ক্ষেতের বেগুন গাছ মরেছে। তারপরেও তাকে বলেছি, কিছু করা যায় কি না। তড়িৎ-৮০ কীটনাশকের আমদানি ও বাজারজাতকরল হেকেম কোম্পানির পঞ্চগড় জেলার টেরিটরি অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তড়িৎ-৮০, সাদা মাছি দমনের জন্য রেজিস্টার্ড ওষুধ নয়, কীটনাশক ব্যবসায়ী ভুল করে এই ওষুধ বিক্রি করেছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সুদৃষ্টি থাকবে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বেগুন ক্ষেতে ব্যবহৃত বালাইনাশক ‘তড়িৎ’ নামক ওষুধ স্প্রের পর চাষির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।