উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান
লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে কিনেছেন একাধিক প্লট
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
যশোর প্রতিনিধি
যশোর পিডাব্লিউডির একজন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাড়ির প্ল্যান পাসের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া শহরের তার নামে ও বেনামে বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে জানা যায় পিডাব্লিউডির উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি ২০১৬ সালে যশোর পিডাব্লিউিডিতে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে ২০০৪ সালে তিনি রাজশাহীতে ছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি নড়াইলে যোগদান করেন। নড়াইল থেকে ২০১৭ সালের শেষে আবার যশোর পিডাব্লিউডিতে যোগদান করেন। ২০১৭ সাল থেকে ৬ বছর তিনি যশোর পিডাব্লিউডিতে কর্মরত রয়েছেন। একই জেলায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। পিডাব্লিউডির বিভিন্ন নির্মাণকাজের সাইড দেখাশোনা করতে গিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া বহুতল বাড়ির প্ল্যান পাশের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যশোর শহরে ৭৫ ফিটের ওপরে বাড়ি নির্মাণ করতে হলে বিল্ডিং কনসট্রাকশন কমিটির মাধ্যমে প্ল্যান পাস করাতে হয়। সাত সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য সচিব। রয়েছেন অপর পাঁচজন সদস্য। তারা হলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, পৌরসভার প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) স্থপতি/প্রকৌশলী/পরিকল্পনাবিদ, উপজেলা প্রকৌশলী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। এই সাতজন বিল্ডিং কনসট্রাকশন কমিটির সদস্য। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসমূহের আওতায় বহির্ভূত এলাকায় সুউচ্চ ভবনের নকশা অনুমোদন ও ভবনের গুণগতমান নিশ্চিত করবে এই কমিটি। প্ল্যান পাসের জন্য ২৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন নিতে হয়। প্ল্যান পাশের আবেদন জমা পড়লে মিটিং ডাকা হয়। পিডাব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য সচিব হওয়ায় সুবিধা হয়েছে উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের। পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলীর ফাইল মেনটেইন করে উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে প্ল্যান পাশের ফাইল পুঁজি করে প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দেয়া না হলে তিনি ফাইল মিটিংয়ে উত্থাপন করেন না। ফলে প্ল্যানও পাস হয় না। বাধ্য হয়ে বাড়ির মালিকরা প্ল্যান পাসের জন্য কামরুজ্জামানকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দেন। ইতিপূর্বে শহরের ঢাকা রোডে নিটোল মটরসের ১০তলা ভবনের প্ল্যান পাস করানোর জন্য কামরুজ্জামান ২ লাখ টাকা ঘুষ নেন। এছাড়া সম্প্রতি শহরের পুরোনো কসবা কাজিপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার হোসেন আলী গংয়ের ৯তলা বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। একই এলাকার মসজিদের পূর্ব পাশে এনামুল গংয়ের ৯তলা বাড়ির প্ল্যান পাস করানো বাবদ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান অনুরুপ ঘুষ দাবি করেন। টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় কামরুজ্জামানের সাথে ওই বাড়ির মালিকদের দেনদরবার চলছে। এভাবেই দুর্নীতির মাধ্যমে কামরুজ্জামান বহু বাড়ির মালিক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এসব ঘুষের টাকা দিয়ে কামরুজ্জামান শহরের চাঁচড়া রাজবাড়ী এলাকায় কিনেছেন চারটি প্লট। এ বিষয়ে কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তিনি তার কোনো প্লট নেই বলে অস্বীকার করেন। একই সময় বলেন, তার বিরুদ্ধে লিখে কিছু করা যাবে না। কারণ, উচ্চপর্যায়ে তার রয়েছে বড় বড় আত্মীয়স্বজন। পরে তিনি স্বীকার করেন চাঁচড়া এলাকায় তার একটি প্লট আছে। অভিযোগে আরো জানা যায়, কামরুজ্জামান প্লটের কথা অস্বীকার করলেও তার নামে বেনামে চাঁচড়া এলাকায় চারটি প্লট রয়েছে। একইভাবে তিনি চাকরিবিধি ভঙ্গ করে সরকারি চাকরিরত অবস্থায় শহরের রেল রোডে তাকওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটেন্ট নামে একটি ফার্ম করেছেন। প্রোপাইটার হিসেবে নিজের নামে পৌরসভা থেকে নিয়েছে একটি ট্রেড লাইসেন্স, যা সম্পূর্ণ সরকারি চাকরি বিধি বহির্ভূত। ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ব্যক্তিগত ব্যবসা বা চাকরি-সংক্রান্ত বিধান (বিধি ১৭) বলা হয়েছে- এই বিধির অন্য ধারায় বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া তাহার সরকারি কর্তব্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে বা কোনো চাকরি কিংবা কর্ম গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে একজন নন গেজেটেড সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন, যেখানে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের শ্রম খাটাতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসার বিস্তারিত বর্ণনাসহ সম্পত্তির বিবরণ দাখিল করবেন। অথচ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান এসব কোনো নিয়মণ্ডকানুন মানেননি। এ বিষয়ে যশোর পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কামরুজ্জামান আমার কাজে তো অনুপস্থিত নেই। তিনি তো ঠিকঠাক কাজ করছেন। তাছাড়া আমার কাছে তো কেউ অভিযোগ করেনি। এগুলো দেখার জন্য সরকারের অন্য বিভাগ রয়েছে। এসব কথা বলে তিনি কামরুজ্জামানের বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা সংশ্লিষ্টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।