মানবপাচারকারী চক্র ফের সক্রিয়

আতংকিত লোকজন ৩ পাচারকারী আটক এক ভিকটিম উদ্ধার

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আবারো মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। উখিয়া-টেকনাফে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসকে কাজে লাগিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মানবপাচারকারী চক্র। ফলে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারাও মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ছে নিয়মিত। শুধু পুরুষই নয়, চক্রের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারী ও শিশুরা। বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে এই চক্রের কিছু সদস্য আটক হলেও চক্রের গডফাদাররা সবসময় আড়ালে থেকে যায়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মিয়ানমারভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশেও সক্রিয় রয়েছে। এই জঘন্য অপরাধ কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ও বাংলাদেশি স্থানীয় কিছু অপরাধী চক্রের সদস্যরাও।

গতকাল ভোরে মানবাধিকার পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে ৮ এপিবিএন আটক করে। এ সময় তদের হাতে মিয়ানমারে জিম্মি থাকা ১২ দিন পর কেফায়েত উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গাকে কৌশলে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা হয়েছে। তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯ এর বাসিন্দা। আটক পাচারকারীরা হলো- টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়ার কলিম উল্লাহ, লম্বরী গ্রামের তারিকুল ইসলাম এবং উখিয়ার ক্যাম্পের বালুখালীর ক্যাম্পের বাসিন্দা এনাম উল্লাহ।

উখিয়াস্থ ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ জানান, গত ৮ জুলাই ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কেফায়েত উল্লাহ (২৪) ও হামিদ হোসেন (২৫) নামে দুই ব্যক্তিকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মানবপাচারকারীরা। পরে সেখান থেকে হামিদ হোসেন কৌশলে পালিয়ে এলেও কেফায়েত উল্লাহকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মিয়ানমারের পাচারকারীদের কাছে। সেখানে তাকে আটক করে মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ঘটনা জানার পর ৮ এপিবিএন উখিয়া ও টেকনাফের সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এরপর একে একে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীদের চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়। তারপর তাদের মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচার জিম্মি ওই রোহিঙ্গা যুবককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ‘আরসা’ সন্ত্রাসীরা অর্থ উপার্জন করতে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভবনা রয়েছে। তবুও বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় আটক মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে প্রক্রিয়া চলছে। এপিবিএনের কাছে আটককৃতরা স্বীকার করেছে, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয়দের মিয়ানমার এবং মালয়েশিয়ায় পাচার করে আসছে তারা। প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

এএসপি ফারুক আহমদ আরো জানান, আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে উখিয়া-টেকনাফ উপকূল দিয়ে সাগরপথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হতো জোরেশোরে। পাচারের শিকার লোকজন মালয়েশিয়া পৌঁছালে তাদের মারধর করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে ছেড়ে দিত মানবপাচারকারীরা।

পরবর্তীতে পাচারের শিকার লোকজন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সেখানে বিভিন্ন কাজে জড়াতেন। ওই সময়ে সাগরপথে মানবপাচারে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় প্রশাসনের শক্ত অবস্থানে কারণে মানবপাচার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের দিকে এই রুটে ফের মানবপাচার সক্রিয় হয়ে উঠে। তবে পুরোনো এবং নতুন পাচারকারীদের সমন্বয়ে গঠিত মানবপাচারের চক্রটি এখন আগের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশেও সক্রিয় রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এ চক্রের তিন সদস্য ৮ এপিবিএনের হাতে আটক হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।