শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে একচিলতে সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির এক অপরূপ নিবিড় মেলবন্ধন থেকে। বলছিলাম, পাহাড়ি টিলা আর সবুজ ও সুশৃঙ্খল গাছের ছায়াতলে ঢাকা রামু উপজেলার রাবার বাগানের কথা। কক্সবাজার থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় এই রাবার বাগানের অবস্থান। সারি সারি রাবার গাছের বাগানে ঢুকলে মন হারিয়ে যাবে সবুজের সমারোহে। এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সৌন্দর্য। নিবিষ্ট মনে প্রকৃতিতে অবগাহন করতে করতে কখন বেলা গড়িয়ে যাবে টেরও পাবেন না। বাগানে ঢুকতে কোনো বাধানিষেধ নেই। তবে রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় ঢুকতে অনুমতি নিতে হয়। কারখানার ভেতরেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অফিস। বাইরে দায়িত্বরত আনসার সদস্যকে বললে তিনি অফিসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। রাবার বাগানের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা মেলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষা সফর বা ভ্রমণে আগত বিদ্যালয় ও বন্ধু মহলের আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, নাচ-গানে মুখরিত হতে। তাছাড়াও প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রামু রাবার বাগান পরিদর্শন করতে আসেন। বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৬০-৬১ সালে অনাবাদি জমি জরিপ করে গবেষণার মাধ্যমে রামুতে ২ হাজার ৬৮২ একর জমিতে সর্বপ্রথম রাবার চাষাবাদ শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ রাবার বাগান আজ দেশের অন্যতম স্থান দখল করে নিয়েছে। এই বাগানে প্রায় ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার উৎপাদনক্ষম গাছ রয়েছে। যেখান থেকে আনুমানিক আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপন্ন হয়। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষের একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার (রেস্ট হাউজ) রয়েছে। সেই বিশ্রামাগারে তিনটি কক্ষ (একটি ডাবল তিনটি সিংগেল বেড), একটি ড্রয়িং ও একটি কিচেন রয়েছে। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত চেয়ার। বাংলাদেশ স্কাউট রামু উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবু সুকুমার বড়ুয়া জানান, রাবার বাগানসহ রামু বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যদি সরকারি উদ্যোগে সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ পর্যটককেন্দ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কক্সবাজারের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে নতুনমাত্রা যোগ হবে বলে আশা করি। রাবার বাগানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি জানান, আমি শুনেছি ১৯৬৯ অথবা ১৯৭০ সালের কোনো এক দিন বঙ্গবন্ধু এখানে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই সময় গণসংযোগ করছিলেন। কক্সবাজারে কর্মসূচি সেরে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন। পথে হাইওয়ে সংলগ্ন রেস্ট হাউসে সাময়িক বিশ্রাম নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দি পাল রায় দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, ‘নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রামু রাবার বাগানকে ঢেলে সাজানো হলে পর্যটন শিল্প বিকাশে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। তবে এটিকে নিয়ে আমাদের সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে, আশাকরি আমরা কাজ শুরু করব। এবং এটি রামুর পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।