সুপারি চুরির অভিযোগে রামুতে কিশোর নির্যাতন

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি

বাড়ি থেকে ডেকে এনে সুপারি চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের পর পুলিশ তাকে রামু থানায় ২ মাস আগে দায়েরকৃত মোটরসাইকের চুরির একটি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। বর্বরোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গ্রামবাসী।

চুরির অপবাদে কিশোর নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন। শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও তার গলায় সুপারি ঝুলিয়ে ও মাথার চুল কেটে দিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়।

নির্যাতনের শিকার মো. বাবুল (১৬) রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সিকদারপাড়া এলাকার মৃত মঞ্জুর আলমের ছেলে। শিশুটির মা আমিনা বেগমও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।

বাবুলের খালা রাহেলা বেগম জানান, সুপারি চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার ভাগিনা বাবুলকে হাতুড়ি, লাটিসোঁটা দিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করেছে। এমনকি শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। আঘাতের ফলে বাবুলের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। দুই হাত তেতলে দেয়া হয়েছে।

বাবুলের মামা মুফিজুর রহমান জানান বাবুল টমটম চালাত। গত শুক্রবার সকালে বাবুলকে এলাকার রাকিব ও তানজিদ নামের দুই কিশোর তার টমটম গাড়িটি ভাড়া করে সুপারি নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রাকিব, তানজিদ ও টমটম চালক বাবুলকে সুপারি চোর আখ্যায়িত করে তাড়া করেন- স্থানীয় মৃত জালাল আহমদের ছেলে জয়নাল, কবির আহমদের ছেলে কামাল, ইউসুফ জালালের ছেলে জহিরুল ইসলাম সিকদার ও ওসমান গনির ছেলে মো. হানিফ। এ সময় রাকিব ও তানজিদ পালিয়ে গেলে টমটম চালক বাবুলকে ধরে সুপারি চোর আখ্যা দিয়ে মারধর শুরু করা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হকও ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুলকে নির্যাতন করেন ও পুলিশকে জানান। বাবুলকে নির্যাতনকারীরা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দিলে রামু থানার উপ-পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া ও উপ-পরিদর্শক অসীম দাশ বাবুলকে আটক করে রামু থানায় নিয়ে যান। পরে তাকে ২ মাস আগে দায়েরকৃত একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলায় জড়িত উল্লেখ করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত জয়নাল জানান, তার বাগান থেকে সুপারি চুরি করার সময় বাবুলসহ তিনজনকে স্থানীয় ছেলেরা তাড়া করে। এ সময় সুপারি ভর্তি টমটম নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবুলকে হাতেনাতে আটক করে রামু থানার উপ-পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া জানান, সুপারি চুরি নয়, মোটর সাইকেল চুরির ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। তবে উপ-পরিদর্শক অসীম দাশ জানান, সুপারি চুরির অভিযোগেই জনতা বাবুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। কোনো মামলা না থাকায় তাকে আগের মোটরসাইকেল চুরির একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানিয়েছেন, তিনি নিজেই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নির্দোষ হলে ছেলেটিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হবে। এদিকে বাবুলের জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৬ বছর উল্লেখ থাকলে দুইমাস আগে দায়ের করা মোটরসাইকেল চুরির মামলায় ২০ বছর দেখিয়ে চালান দেয়া হয়েছে।