এডুকেশন ওয়াচের গবেষণা
করোনায় শিখন ঘাটতি তিন বিষয়ে ফেলের তথ্য উপস্থাপন
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামারি করোনাকালে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ায় ব্যাপক ঘাটতি হয়েছে। এ শিখন ঘাটতির কারণে অষ্টম শ্রেণির ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। অর্থাৎ তারা ৩৩ শতাংশ নম্বরও পায়নি। আর নবম শ্রেণিতে ফেলের হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। এডুকেশন ওয়াচের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ের ওপর নেওয়া পরীক্ষার ফলাফলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। ‘মহামারি-উত্তর শিক্ষা: স্কুল শিক্ষার পুনরুদ্ধার ও আগামীর অভিযাত্রা’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর ৯০ মিনিটের পরীক্ষা নেয় সংস্থাটি। শিক্ষকরা এ পরীক্ষা মূল্যায়ন করেন। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী বাছাই করে তাদের এ পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলেনে গবেষণা প্রতিবেদনের সার্বিক দিক তুলে ধরেন এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণার সার্বিক কাজ করা হয়। একই বছরের অক্টোবরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনের মাধ্যমিক পর্যায়ে শিখন মূল্যায়ন অংশে অষ্টম ও নবম শ্রেণির এমন ফলাফলের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, শুধু ফেল নয়, পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল বলে বিবেচিত ডি গ্রেড (৩৩ থেকে ৩৯ শতাংশ নম্বর) পেয়েছে অষ্টম শ্রেণি ৩৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণিতে ডি গ্রেড পেয়েছে ৩৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলায় ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী, ৬৫ শতাংশ ইংরেজিতে এবং গণিতে ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফলাফল অষ্টম শ্রেণির তুলনায় সামান্য ভালো। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ৮৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৭২ শতাংশ এবং গণিতে ৬৫ শতাংশ পাস করেছে।
মূল্যায়নে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তুলনামূলকভাবে ভালো ফলাফল করেছে। উদাহরণস্বরূপ-মূল্যায়নে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, আর ছেলেদের মধ্যে এ হার ৬৮ শতাংশ। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মেয়ে ও ছেলেদের ৭৩ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে।
এদিকে উভয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৯০.৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফল সবচেয়ে পিছিয়ে হবিগঞ্জ। এ জেলায় মোট পাসের হার ৪২.৯ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, করোনা মহামারি পরবর্তী শিখন কার্যক্রমে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫.১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে তাদের নির্ভরতা বেশি ছিল। এজন্য প্রতি মাসে এক হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গবেষণার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় অক্টোবরে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫.১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে তাদের নির্ভরতা বেশি ছিল। একই রকম চিত্র দেখা গেছে শহর ও গ্রামাঞ্চলসহ সব ক্লাস্টারে।
অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরিংয়ের জন্য প্রতি মাসে ১,১০০ থেকে ৩, ০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।
গাইড বইয়ের জন্য ব্যয় : আরো দেখা যাচ্ছে যে, ৭৯ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৮২.৫ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী তাদের পাঠ এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাণিজ্যিক গাইডবই অনুসরণ করেছে। ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে ৬৬৯ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ২,০৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অংশীজনদের মতামত : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকার একটি ইতিবাচক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
স্কুলের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট ছিলেন। সমীক্ষার সব ক্লাস্টারে একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। তবে, তাদের সন্তুষ্টি থেকে অবশ্যই এটা বোঝা যায় না যে, স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত শিখনফল অর্জনে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে।
কারণ, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং এবং বাণিজ্যিক গাইড বইয়ের ওপর বেশি নির্ভরতাও লক্ষ্য করা গেছে।
এ সময় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রদশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপার্সন ড. কাজী খলীকুজ্জমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিখন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, কাজী ফারুক আহমেদ, এডুকেশন ওয়াচের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।