ট্রলারে ১০ খুন : হামলায় অংশ নিয়েছে চার ট্রলারের অন্তত ৬০ জেলে

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

সাগর থেকে মাছ ধরে কূলে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকার আনোয়ার কামালের ফিশিং ট্রলার। এ সময় ১২-১৩ জন দস্যু আনোয়ারের ট্রলারের মাছ, জালসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে নেয়। তা নিকটে অবস্থান করে প্রত্যক্ষ করেছিল আরো কয়েকটি ট্রলারের জেলে। যেসব ট্রলারের জেলেরা একযোগে জলদস্যুদের ট্রলারের দিকে এগিয়ে গেলে দস্যুরা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গুলি শেষ হয়ে গেলে জেলেরা চারটি ট্রলারযোগে একযোগে হানা দেয় দস্যুদের ট্রলারে। অন্তত ৬০ জেলে দস্যুদের মারধর করে হাত-পা বেঁধে দস্যুদের হিমঘর বা কোল্ডস্টোরেজে বন্দি করে। একই সময় আনোয়ারের ফিশিং ট্রলার থেকে লুট করা মালামাল নিজের ট্রলারে নিয়ে নেয় জেলেরা। এরপর দস্যুদের ট্রলারটি অর্ধেক ডুবিয়ে কূলে ফিরে যায় জেলেরা। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপকূলের মাঝামাঝি এলাকায় এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। এর ১৪ দিন পর ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা আর এক ট্রলার নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নামবিহীন ওই ট্রলারটির মালিক (যিনি নিহতদের একজন) সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। এ মামলায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ধরে পুলিশ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যে ৯ জনের কাছে প্রাপ্ত তথ্য, পুলিশের কাছে দেয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দি ও আদালতে দেয়া ৭ জনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হত্যার পুরো ঘটনাটি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মহেশখালীর সোনাদিয়া এলাকার মৃত মোস্তাক আহমদের ছেলে দস্যু সর্দার খাইরুল বশর সুমনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সমুন প্রথম দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পনকারী জলদস্যুদের একজন। সুমনকে ৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চার দিনের রিমান্ড শেষে সুমনকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আখতার জাবেদের আদালতে হাজির করা হয়। ওই আদালতে সুমনও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেছে বলে আদালত সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (গোয়েন্দা) দুর্জয় বিশ্বাস চার দিনের শেষে খাইরুল বশর সুমনকে আদালতে হাজির করা হলে ওখানে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কি বলেছেন তা জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রলারে ১০ মরদেহ উদ্ধারের মামলার পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। সুমনসহ গ্রেপ্তার ৯ জনের কাছে প্রাপ্ত তথ্য মতে ১২-১৩ জনের একটি গ্রুপ সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝি (যিনি নিহতদের একজন) ও নুরুল কবিরের (যিনিও নিহতদের একজন) নেতৃত্বে সাগরে গিয়েছিল ডাকাতি করতে। যার জের ধরে ক্ষুব্ধ জেলেরা পিটিয়ে হত্যা করে তাদের। এ ঘটনায় আনোয়ার কামালের ট্রলারের জেলে ছাড়াও আবছার, আমান ও বাবুল মাঝির ট্রলারের জেলেরা হামলায় অংশ নিয়েছিল। যেখানে অন্তত ৬০ জন জেলে হামলায় অংশ নেয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ৯ জনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় অংশ নেয়া ২৫ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। যাদের ঠিকানা যাচাই-বাছাই এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আনোয়ার কামালকে গ্রেপ্তার করা সক্ষম হয়নি। আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা গেলে ঘটনাটি আরো বিস্তারিত জানা যাবে।