আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, এগুলো করে আপনারা ব্যর্থ হবেন। আপনারা এ ভুল পথ থেকে বেরিয়ে আসুন।
গতকাল সোমবার দুপুরে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এ ‘কৃষি বিপ্লব ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম ও আইডিইবি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, একটু আগেই আমি শুনলাম, বিএনপি বলছে আগামী ১৫ দিন তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। এ হুমকিও দিচ্ছে, ঢাকা শহরে তারা অবস্থান নেবে এবং রাজধানীকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সরকার পতনে গত ১৪ বছর বিএনপি সফল হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা আবার ব্যর্থ হবেন, আবারও চরম হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। আমি বিনীতভাবে বলছি, আপনারা এ ভুল পথ থেকে বেরিয়ে আসুন। আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ, অবরোধ, অবস্থান করে এ সরকারের পতন আপনারা করতে পারবেন না।
গত ১৪ বছরে পারেননি, আগামী একদেড় মাসেও পারবেন না। আপনারা ব্যর্থ হবেন। ব্যর্থতার গ্লানি নেওয়ার চেয়ে আমার মনে হয় আপনাদের উচিত হবে নির্বাচনে আসা এবং জনগণের রায় মাথা পেতে মেনে নেওয়া। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত সক্ষম বিরোধী দল থাকুক। এটা যেকোনো দেশের সরকারের জবাবদিহিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন এত উন্নয়ন করেছি, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রেফারেন্স কান্ট্রি, উন্নয়নের রোল মডেল। ক্লিনটন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি) থেকে শুরু করে যত প্রেসিডেন্ট আছেন, সবাই বাংলাদেশকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন, সব ফোরামে বাংলাদেশ প্রশংসিত। আমরা চাই, সারা জাতিই চায়, এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে, সেটিকে আরো গতিময় করতে চাই। এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। দেশে একটি শান্তিময় পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সরকারের আমলে কৃষি উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নে আগামীতেও কৃষি অনেক গুরুত্ব রাখবে। তিনি বলেন, গ্রামে রাস্তার পাশের জমি কিনে মানুষ ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। এর ফলে জমি কমছে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আর নতুন চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য। গতকাল সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এ দেশের দিন বদলের মূলনায়ক কৃষক। বাংলাদেশের কৃষি আমাদের রক্ষাকবচ। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষি ভূমিকা পালন করছে। কৃষি সাফল্য না দেখালে আজকে মূল্যস্ফীতি আরো অনেক বাড়ত। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে সংকট দেখা দিয়েছে। এটা কীভাবে উত্তরণ করা যায়, আমরা সেদিকে জোর দিতে চাই। আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইডিইবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. শাহজাহান কবীর। এতে আরো বক্তব্য দেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কৃষিবিদ তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. ইকরাম-উল-হক, ফাও’র কৃষি বিশেষজ্ঞ মঈন উস সালাম, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মু. রাশেদ ইফতেখার, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। সেমিনার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান।