বাংলাদেশের মতো দেশে মেয়েদের শিক্ষার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় মেয়েদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার প্রয়োজন। কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ নারী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার। নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা এবং চলাচলের অত্যন্ত সীমিত স্বাধীনতার মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নিরাপত্তা ইস্যু এবং সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা, যেমন বাবা-মা কিশোরী মেয়েদের স্কুলে যেতে বাধা দেয়া, মেয়েদের স্কুলে খুব সীমিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। মহিলাদের সাক্ষরতা এবং ভাষা দক্ষতা নিম্নস্তরে থেকে যেতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোয় মেয়েদের শিক্ষা প্রসারে সম্মিলিত উদ্যোগ বিষয়ক কর্মশালায় এসব কথা তথ্য ওঠে আসে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন অংশীদারসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। গতকাল শহরের তারকামানের আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, বৈষম্য এবং লিঙ্গ বৈষম্য কক্সবাজার জেলায় মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে এটি প্রতীয়মান হয় যে, মেয়েদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিশোরী মেয়েরা স্কুল ছেড়ে চলে যায়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপি’র নির্বাহী পরিচালক মুর্শেদ আলম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ একে ফারুক আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দিন এবং মালালা ফান্ড বাংলাদেশের ইন-কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মোশাররফ তানসেন।
বাংলাদেশে জলবায়ু-সহনশীল নারী শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য মনোযোগ ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত দেন বক্তারা।
তারা বলেন, পাঠ্যক্রমের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষাকে একীভূত, নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণ এবং সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলার উপযোগী করা দরকার।
কর্মশালায় বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসন্ধানের সূত্র ধরে বাল্যবিবাহের একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ঈদগাঁও উপজেলায় বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির হার ৮২ শতাংশ)। পরের অবস্থানে উখিয়া উপজেলায় ৭৫ শতাংশ। এছাড়া রামু ৭২ শতাংশ, টেকনাফ ৬৬ শতাংশ, মহেশখালী ৬১ শতাংশ, কুতুবদিয়া ৫৪ শতাংশ এবং কক্সবাজার সদর ৫১ শতাংশ, চকরিয়ায় ৩২ শতাংশ ও পেকুয়ায় ২৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য স্থানীয়দের অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপে জড়িত করে। টেকনাফ ও উখিয়ায় কাজের সন্ধানে গিয়ে মানুষ পাচারের শিকার হয়। মিয়ানমার সীমান্তে মাদক পাচারের রুটগুলো নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী আয়ের জন্য মাদক ব্যবসার আশ্রয় নিয়েছে, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলোকে আরো জটিল করে তুলেছে।