সাগরতীরে স্নান আনন্দ-উল্লাসে মানুষের স্রোত
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
টানা ছুটিতে কক্সবাজারের সাগরতীরে মানুষের স্রোত নেমেছে। বৈরী আবহাওয়া হলেও সাগরের নোনাজলের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় মেতেছেন সব বয়সের মানুষ। সাগরতীরে স্নান, আনন্দ-উল্লাসের প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দির প্রতিযোগিতায় মগ্ন আগত এসব মানুষ।
কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা গতকাল লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থানের কথা স্বীকার করলেও মানুষের ঢল বলছে বাস্তবে আগত পর্যটকের সংখ্যা তারও অনেক বেশি। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সব ক’টি পয়েন্টে মানুষের ঢল দেখা গেছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমুদ্রসৈকতে ৭ দিনের পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল চলছে।
যে কারণে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে রঙিন ছাতায়। সৈকতের প্রবেশের শুরুতেই মুগ্ধ পর্যটকরা রঙিন ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে তুলছেন ছবি। সৈকতের বালিয়াড়িতে দৌড়াচ্ছে ঘোড়া, আর এসব ঘোড়া পিঠে চড়ে ঘুরছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আবার ঘোড়ার পিঠেও ছবি তুলছেন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ। অনেকেই সমুদ্রস্নান আর জেডস্কিতে চড়ে প্রশান্তির খোঁজে সাগরে মেতেছেন নিজের মতো।
দুবাই প্রবাসী শিহাব করিম বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে এসেছি। এখন পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। এখানে সৈকতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি পর্যটন মেলা হচ্ছে পরিবার নিয়ে খুব আনন্দ করছি। বিশেষ করে, সৈকতের প্রবেশদ্বারে রঙিন ছাতাগুলোতে ছবি তুলে খুবই ভালো লেগেছে।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক আকরাম হোসেন বলেন, চাকরি জীবনে খুবই কম ছুটি পাওয়া হয়। এবার টানা ৩ দিনের ছুটিতে একটু প্রশান্তি খোঁজে কক্সবাজার ছুটে আসে।
এদিকে সাগরে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। ঢেউয়ের মাত্রাও বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দিনভর থাকলেও বিকাল ৩টার দিকে টানা এক ঘণ্টার মাঝারি বৃষ্টিতে পরিবেশ হয়ে উঠে হিম-শীতল। যা পর্যটকের মধ্যে তৈরি করেছে ভিন্ন এক প্রশান্তির। তবে আবহাওয়াগত কারণে সৈকতের সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, টানা ছুটি ও পর্যটন মেলাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সৈকতে এখন লাখো পর্যটক। তাদের অধিকাংশই কিন্তু সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত। এখন তাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, চেষ্টা করছি পর্যটকদের সব্বোর্চ নিরাপত্তা দেয়ার।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটকের আগমণের সংখ্যা বেড়েছে। কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেলের ৯৯ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এ হিসাব মতে, শুক্রবার লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন।
তিনি জানান, পর্যটক দিবস ও সৈকতের উৎসবকে কেন্দ্র করে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে ভিন্ন শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আগত পর্যটকদের সেই ছাড় দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখন কক্সবাজারে। সৈকতের পরিস্থিতি বলছে পর্যটক আগমণের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। যাদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে চারদিকে নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, আগত পর্যটকরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক সৈকতসহ অন্যান্য স্পটে ভ্রমণে যাচ্ছে। এছাড়া টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল শুরু করায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও পর্যটকরা ভ্রমণ যাচ্ছেন। যেখানেও নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।