বাংলাদেশ ও ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মানবতার ছোঁয়া

মানবতার সেবাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে চিকিৎসা সহযোগিতার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কূটনীতির মাধ্যমে ভুটানে মানবসেবার অনন্য নজির স্থাপন করছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিবিড় কূটনৈতিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা। করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশ ভুটানকে ওষুধ ও স্যানিটারিসামগ্রী প্রদান করে। ভুটানের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে এমবিবিএস ও বিডিএস পড়াশুনার জন্য প্রতি বছর স্কলারশিপ প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক বিভিন্ন বৈঠকে ভুটানের রাজা এবং প্রধানমন্ত্রীকে ভুটানের স্বাস্থ্য খাতে সম্ভাব্য সব রকম বিষয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প’। এ উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ১২ জন চিকিৎসক ভুটানের জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালে বিশেষ সার্জারি ক্যাম্প পরিচালনা করছেন। চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ভুটানের অগ্নিদগ্ধ এবং প্লাস্টিক সার্জারি সংক্রান্ত জটিল অপারেশনের মাধ্যমে মানবিক সেবা প্রদান করছেন। ভুটানের জনগণের জন্য মানবিক সহযোগিতার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে বিশেষ বৈঠক করেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেলওয়াংচুক। এই উপলক্ষ্যে ভুটানের রাজা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং দুই দেশের জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্যসেবাসহ মানবিকতার সব দিক ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন নতুন মাইলফলক উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রাজা ওয়াংচুক এই মানবিক আয়োজনের জন্য থিম্পুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়, চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন এবং বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প’ উপলক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে থিম্পুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের জাতীয় সংসদের স্পিকার নামগিয়েল ওয়াংচুক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায় বলেন, এই ক্যাম্পের মাধ্যমে ‘মানবতার জননী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে ভুটান-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার যে অনন্য নজির স্থাপিত হলো, তা দুই দেশের সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জীবনের মানবিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এই মহতী উদ্যোগের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভুটান সরকার এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প’ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত বাণী পাঠ করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি ভুটানে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং থিম্পুতে একটি বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা ভুটানের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ‘শেখ হাসিনা অন ইন্টারন্যাশনাল স্টেজ’ বিষয়ে বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর সুজন দেবনাথ। ভুটানের স্পিকার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ দেন। ভুটানের স্বাস্থ্য সচিব এবং দুই দেশের চিকিৎসকরা চিকিৎসাবিষয়ক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।