প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও একশ্রেণির জেলে দেদার মাছ শিকার করছে সাগর ও নদীতে। এতে মাছের বংশ বিস্তাররোধে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ রক্ষায় সাগর ও নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রথম দিনই অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি ইলিশ, ১২০ কেজি সামুদ্রিক ছোট মাছ, ২০ হাজার মিটার ইলিশ জাল ও ৭টি টং জাল জব্দ করা হয়েছে। এ সময় তিন জেলেকে গ্রেপ্তার করে নৌ-পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সীতাকুন্ডের গুলিয়াথালী ও ভাটিয়ারি সন্দ্বীপ চ্যানেলে এ অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম, কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. ইসমাইল ও মৎস্য বিভাগ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে সাতটি জালসহ তিন জেলেকে গ্রেপ্তার করে সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২০ কেজি ছোট মাছ ও ৩ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়।
কুমিরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির আইসি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, জব্দকৃত সামুদ্রিক মাছ ৬ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। ইলিশগুলো এতিমখানায় বিতরণ করা হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জব্দ জাল পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছ ধরা বন্ধ হলে তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ জেলেই ঋণ নিয়ে মাছ ধরতে যায় সাগরে। হঠাৎ করে মাছ ধরা বন্ধ হলে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এতে অনেক জেলে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা কিংবা ট্রলারে করে সাগরে পারি দেন মাছ ধরতে। মূলত আয় বন্ধ থাকায় এ ধরনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হন জেলেরা।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে মাছের বংশ বিস্তার আশানরুপ হবে না। ফলে সাধারণ মানুষ আর আগের মতো মাছ পাবে না। বাজারে দেখা দেবে মাছের সংকট। বাজারে সরবরাহ কম থাকলে ক্রেতাদের উচ্চ মূল্যে কিনতে বাধ্য হতে হবে। তাই প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এতে বঙ্গোপসাগর কিংবা নদীতে মাছের উৎপাদন বাড়বে। সেই সঙ্গে বাজারেও মাছের সরবরাহ বাড়বে। এক কথায় প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়য়ের লাভ।
এদিকে সরকার মাছ ধরতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর হালদা নদীতে মাছ ধরা থেমে নেই। এরই মধ্যে এসব জেলেদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। গেল শুক্রবার অভিযান চালিয়ে ৫০০ মিটার অবৈধ ঘেরাজাল জব্দ করেন উপজেলা মৎস্য অফিস। শুক্রবার ভোরেই নদীতে পরিচালিত হয় এই অভিযান। এ সময় হালদা নদীর উপজলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট থেকে গুমানমর্দ্দন অংশে এ অভিযান পরিচালনা করেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান। এর আগে এ সপ্তাহে পৃথক দুই অভিযানে মাছ শিকারের জন্য বসানো ৫টি ঘেরাজাল জব্দ করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান।