সিপিডির দুই অর্থনীতিবিদের মতামত

বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই জরুরি অর্থনৈতিক সুশাসন

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাবেক গভর্নরসহ অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার দেশ ব্যাংকে এসেছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) শীর্ষ দুই অর্থনীতিবিদ। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচন ভাবনা থেকে নয়, অর্থনীতির প্রয়োজনের নিরিখে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সুশাসন খুবই জরুরি। এ জন্য খেলাপিঋণ কমানো, ব্যাংক খাতের সংস্কার, অর্থপাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি। এ সময় তারা দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকের সুদের হার ও ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে তারা বলেছেন, সুদের হার বাড়ানো হলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। আর ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হলে তার সুফল মিলবে প্রবাসী আয়ে।

এই দুজনের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নানা সূচক, নীতি উদ্যোগ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। সংকট কাটাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, উপস্থাপনায় সেগুলো তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নয়। বরং এর জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ছয়টি কারণও দায়ী। এই ছয় কারণ হচ্ছে- আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতা (অতিমাত্রায় তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত বন্যা), অনৈতিক ব্যবসা (সিন্ডিকেট, মজুতদারি, মূল্য ঠিক করা, কৃত্রিমভাবে ঘাটতি দেখানো ইত্যাদি), দুর্বল করপোরেট পরিচালনা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সংস্কৃতি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং (আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি ও অর্থ পাচার)। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের তিনটি কারণও উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া; পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া; জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণের মূল্যবৃদ্ধি। সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিপিডির দুই অর্থনীতিবিদ আমাদের নেওয়া নানা পদক্ষেপের সঙ্গে একমত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নীতি উদ্যোগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। নতুন করে বেশ কিছু কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, সিপিডির অর্থনীতিবিদেরা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর হওয়া ও ব্যাংকগুলোয় সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দেন। ব্যাংক খাত ঠিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, তা নিশ্চিতের কথাও বলেন। এর আগে গত সপ্তাহে ঋণ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমাতে ‘সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি’ গ্রহণ এবং খরচ কমাতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি। একইভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তার মতে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে এমনিতেই ডলার বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। এর আগে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদও টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দেন।