পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, নৈশপ্রহরী, আয়া ও অফিস সহায়ক এই চারটি পদে নিয়োগের জন্য গত ১০ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই চারটি নবসৃষ্ট শূন্যপদে ২৮ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে ওই পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আয়া পদে নিয়োগে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন সমালোচনা শুরু করে। এই নিয়োগে ঘুষ লেনদেন-সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ প্রতিনিধির হাতেও এসেছে। জানা গেছে, গত শনিবার সকালে উপজেলার জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারটি নবসৃষ্ট শূন্যপদের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে এই নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে আয়া পদের প্রার্থী ডলির পিতা হারুন খান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হেমায়েত তালুকদারের সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষার আগে ২ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের কথোপকথন শোনা যায়। আর এই পদে নিয়োগের জন্য তিনি বলেন বাকি টাকা যথাসময়ে দিতে না পারলে ওই ২ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। এ সময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে হারুন বলেন, বাকি টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি বিক্রি করে দিয়ে দেব। অভিযোগ করা হয়, যেসব পদে নিয়োগ হবে, আগে থেকেই প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের নিয়োগের চেষ্টা করছেন। ঘুষ লেনদেনের অডিও প্রকাশ হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জন্য ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সাব্বির ডাকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুস্তম আলীর কাছে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিদের্শনায় অনিবার্য কারণবশত গত শনিবারের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তবে অবৈধ লেনদেন ও অনিয়মের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হেমায়েত তালুকদার বলেন, আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের ভুয়া অডিওটি এডিট করে প্রতিপক্ষরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
আর নিয়োগের জন্য টাকা নেয়ার বিষয়ে অভিযোগকারি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাব্বির পর পর তিনটি সভায় উপস্থিত না থাকায় তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। সাব্বির তার পছন্দের এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য আমাকে বললে আমি তাকে বলি পরীক্ষায় যারা পাস করবে, তারাই নিয়োগ পাবে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই বলে আমি তাকে জানিয়ে দিই। এর জন্যই সাব্বির আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নিয়োগের জন্য কোনো টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হান্নান মিয়া বলেন, জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গত শনিবারের চারটি পদের নিয়োগ পরীক্ষা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় ও নিয়োগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, নিয়োগ কমিটি বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষ লেনদেন-সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।