ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি হয়।
গতকাল শহরের বৌদ্ধ মন্দিরস্থ ক্যাং পাড়াবাসী, রাখাইন শিক্ষার্থী ও বড়বাজার রাখাইন একতা সংঘের উদ্যোগে ৩টি দৃষ্টিনন্দন কল্পজাহাজ নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রায় রঙ-বেরঙের পোশাক পরিধান করে হাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। এ সময় কল্প জাহাজ নিয়ে ঢাকডোল ও বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ-উন্মাদনায় মেতে উঠে সবাই।
শোভাযাত্রা দেখতে প্রধান সড়কের দু’পাশে অসংখ্য উৎসুক জনতা ভিড় করে। প্রায় ১ ঘণ্টা পর কল্প জাহাজ নিয়ে শোভাযাত্রার ইতি ঘটে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টে এসে। এ সময় সৈকতের বালিয়াড়িতে হাজার হাজার নর-নারীর সম্মিলন। জাহাজভাসা উৎসবের আনন্দে সামিল হয়েছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনও। এ যেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাগরের উত্তার ঢেউয়ের সঙ্গে ভাসানো হয় কাঙ্ক্ষিত কল্প জাহাজ। ঢেউয়ের তালে তালে ভাসছে বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি নান্দনিক কল্প জাহাজ। যা নজর কাড়ে সবার। কক্সবাজার শহর ছাড়া চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, হারবাং, টেকনাফ ও চকরিয়াতেও এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, ‘আজ থেকে ২০০ বছর আগে মিয়ানমারে মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবেরর আয়োজন করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার একসঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এ আয়োজন চলত। সেখান থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারেও এ উৎসবের প্রচলন হয়। যা আজ অবদি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার প্রবারণায় রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করেছে।
কক্সবাজার সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন জানান, ‘আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত ৩ মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্ষাব্রত পালন করেন। এ সময় বৌদ্ধ দায়ক-দায়িকারা প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে অষ্টশীল পালন করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ৩ মাস ব্যাপী বর্ষাব্রত পালন কালে সদ্ধর্ম্ম বিষয়ক লেখাপড়া, গবেষণা ও জ্ঞান আহরণ করেন। বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন আশ্বিনী পূর্ণিমাকেই বলা হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে ১ মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান পালন করা হবে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে।
