ঘরে বসে টাকা আয়সহ নানা প্রতারণার অভিযোগে এক চীনা নাগরিকসহ চক্রের ১৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম বিভাগ। রাজধানীর হাতিরঝিল ও কাফরুল থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের প্রধান চীনা নাগরিকের নাম ঝ্যাং জি ঝাহ্যাং (৬০)।
গতকাল দুপুরে ডিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজে ফোন দেওয়ার নামে ফাঁদ পাততেন তারা। এ ফাঁদে পা দিয়ে কেউ এ চীনা অ্যাপ ডাউনলোড করলেই বিপদে পড়েতেন। অ্যাপ ডাউনলোড করার পরেই মোবাইলের ছবি, ভিডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য চক্রের হাতে যেত। এরপর চক্রের সদস্যরা সেগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতেন। প্রথমে সরাসরি ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন তারা। তাকে না পেলে বাবা-মাসহ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনেহ নম্বরে আপত্তিকর বিভিন্ন ছবি তৈরি করে পাঠানো হতো। একইভাবে মোবাইলফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে ঘরে বসে দিনে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ দেওয়া হতো। এমন এসএমএস পাঠিয়ে বিভিন্নজনকে প্রলুদ্ধ করা হতো। আর এ প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, অভিযানের সময়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সিমে ২৯টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৬ মাসে এসব মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৫০ কোটি টাকারও বেশি পাচার করেছে। সে হিসেবে গত দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করেছে বলে প্রাথমিক তথ্যে পাওয়া গেছে। দেশে এখন পর্যন্ত এ চক্রের হাতে অন্তত দেড় হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছে।
এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে ভারতে অনেক মানুষ মারা গেছে। অ্যাপটি চীনা নাগরিকদের তৈরি। এটির সার্ভার সিঙ্গাপুরে। আর কল সেন্টার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রয়েছে। পাকিস্তানি নম্বর দিয়ে বাংলাদেশিদের কল করা হয়। আর বাংলাদেশি নম্বর ব্যবহার করে ভারতীয়দের কল করা হতো।
চক্রটি অল্প টাকা দিয়ে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। এভাবে তারা এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকেই ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা আপত্তিকর ছবি ব্যবহার করে বিভিন্নজনকে পাঠানোর হুমকি দিত। চক্রের ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে চক্রের আরো অনেকে জড়িত। তারা আত্মগোপন করেছে। অভিযান চলমান আছে।
বিবিসির অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে হারুন বলেন, পাশের দেশে এসব অ্যাপস থেকে ঋণ নিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে ৬০ জনেরও বেশি আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশে কেউ আত্মহত্যা করেছে কি না, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। এ চক্রের হাতে কেউ প্রতারিত হলে ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা মামলা করলে ডিবির সাইবার ক্রাইম বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।