লালমনিরহাটে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

রাতে ঠান্ডা-হিমেল বায়ু আর সকালের শিশিরভেজা ঘাস-পাতা জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে। সেইসঙ্গে গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত যত বাড়ছে, খেজুরের গুড়ের চাহিদাও ততই বাড়ছে। শীতে লালমনিরহাট জেলায় খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির ধুম পড়েছে। খেজুরের মৌ মৌ ঘ্রাণ ভেসে আসছে বাতাসে। শীতের সময় গ্রামীণ জীবনে উৎসব শুরু হয় খেজুরের মিষ্টি রসকে ঘিরে। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে চলে সু-স্বাদে ভরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা উৎসব। গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেজুরগাছের সাদা অংশ চ্যাচ দিয়ে বিভিন্ন রকমের মাটির হাঁড়ি লাগিয়ে রাখা হয়। পরদিন ভোরে সব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে টিনের বড় পাত্রে জ্বাল দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করা হয়।

খেজুর রস সংগ্রহকারী আব্দুর রহিম, আসাদুল মিয়া ও আব্দুল জব্বার জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে গুড় তৈরির কাজ করে আসছেন। বছরের পাঁচ মাস তারা এই কাজ করেন। বাকি সময় অন্য ব্যবসা করেন। শুরুতেই ২০-২৫ কেজি করে খেজুরের গুড় তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে বেড়ে ১-২ মণ পর্যন্ত গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি খেজুরের গুড় বাজারে পাইকারদের কাছে ১৭০ টাকায় এবং খুচরা ১৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আদিতমারী উজজেলা সংলগ্ন মতিন মিয়া, আলী আহম্মেদ ও লাবলু মিয়া জানান, শীতের সময় ঘরে ঘরে খেজুর রসের পিঠা, পায়েশ, গুড়ের মুড়ি-মুড়কি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে আমাদের এলাকায়। শীত শুরু হয়েছে। পিঠাণ্ডপায়েশ খেতে স্বাদে গন্ধে সুস্বাদু খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। গাছিদের তৈরি গুড় মানসম্মত, সে কারণে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বলে জানান তারা। সদর উপজেলার কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, শীত মানেই পিঠাপুলি-পায়েশ, আর খেজুর গুড় ছাড়া ভাবাই যায় না। বর্তমানে অবশ্য ভেজালের যুগে এই গুড়ের স্বাদ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, কৃষকদের খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। দেশে ও বিদেশে খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে। খেজুরের রস ও গুড়কে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। খেজুরের রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। বাজারে নিরাপদ গুড় বিপণনের বিষয়ে মনিটরিং করা হয়। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আব্দুল বাসেত জানান, খেজুরের কাঁচা রস খেলে নিপা ভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। যারা খেজুরের রস সংগ্রহ করে তাদেরও সচেতন হতে হবে। গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় হাঁড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গাছটা নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে, যাতে বাদুড়ের সংস্পর্শে না আসে।