মহাদেবপুরে সুগন্ধি ধানে লাভের স্বপ্ন চাষির

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নওগাঁ প্রতিনিধি

চলতি আমন মৌসুমে ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি দেশীয় জাতের চিনি আতপ ধানের চাষ করেছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের কৃষকরা, যা উপজেলা পর্যায়ে রাজশাহী অঞ্চলের সর্বাধিক জমিতে সুগন্ধি দেশীয় জাতের চিনি আতপ ধান চাষ বলে নিশ্চিত করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চিনি আতপ ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সুজাইল, গোষাইপুর, হাসানপুর, সরস্বতীপুর, বাগধানা, চৌমাশিয়া, রাইগাঁসহ বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে সবুজ চিনি আতপ ধানের শিষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। উপজেলার সুজাইল গ্রামের আব্দুল লতিফ ও আব্দুর রহিমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা এবার মৌসুমের শুরু থেকেই বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করছেন। শেষ মুহূর্তে চিনি আতপ ধানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তারা। এ এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াইয়ে শুরু হলেও চিনি আতপ ধান কাটতে আরো প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। এখন আমন মৌসুমের শেষ মুহূর্ত। এই সময়ে বিভিন্ন মাঠে আমন ধানের শক্ত গাছের গোড়া খেয়ে ফেলত পচা ও কারেন্ট পোকা। প্রতি বছর এগুলো দমনে কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত হয়ে পড়ত কৃষকরা। চলতি আমন মৌসুমে চিনি আতপ ধান চাষে পচা ও কারেন্ট পোকা দমনে গত বছরের তুলনায় কীটনাশক প্রয়োগ কমেছে বলে জানান কৃষকরা। আউশ মৌসুম পরবর্তী সময়ে একই জমিতে আতপ ধান চাষে ফলন ও দাম ভালো পাওয়াই এ উপজেলার ব্যাপক জমিতে চিনি আতপ ধান চাষ হয়েছে। চিনিগুঁড়া বা আতপ চাউলের কোরমা, পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস ইত্যাদির মতো সুস্বাদু খাবার এ অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়। চিনি আতপ চাল সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত হওয়াই এসব খাবার বাদ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা অনুষ্ঠান যেন অপূর্ণ থেকে যায়। এসব খাবার তৈরির প্রধান উপাদান সুগন্ধি চিনি অতপ চাল। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের আপ্যায়নে চিনি আতপ চাউলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে এ উপমহাদেশের মানুষ। ফলে বিদেশিরাও পোলাও-বিরিয়ানির স্বাদ নিচ্ছেন। এতে বিশ্ববাজারে সুগন্ধি চিনি আতপ চালের চাহিদা বাড়ছে। এ উপজেলার সুগন্ধি দেশীয় জাতের চিনি আতপ ধান চাষের ওপর ভিত্তি করে ২০টিরও অধিক অটো রাইস মিলের প্রায় ১০০টি ডয়ারে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টনের অধিক আতপ চাল উৎপন্ন হয়। এ উপজেলার উৎপাদিত চিনি আতপ চাল নওগাঁ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আতপ চাউল উৎপাদনকারী অটো রাইস মিল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি খাতের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে কৃষকরা। এ মধ্যে ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে দেশীয় চিনি আতপ ধান চাষ হয়েছে, যা মোট আমন ধানের শতকরা ৩৮ ভাগ। উপজেলা পর্যায়ে রাজশাহী অঞ্চলের সর্বাধিক জমিতে সুস্বাদু ও সুগন্ধি দেশীয় জাতের চিনি আতপ ধানের চাষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলে চিনি আতপ ধানের বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন তিনি।