মুন্সীগঞ্জে মিগজাউমের টানা বৃষ্টিতে আলু চাষিদের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এমএ কাইয়ুম, মাইজভান্ডারী, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ)

মুন্সীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ও লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চতুর্দিকে বিভিন্ন ছোট বড় ও ডোবা ভরাটের ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় তলিয়ে গেছে অনেক জমি। এ ছাড়া বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কমে শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে জমিতে রোপণ করা আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার বড় ভাঁজ পড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় আলু রোপণ শুরু হয়। এরই মধ্যে ছয় উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি রোপণ করা হয় ২ হাজার কেজি বীজ আলু। অধিকাংশ আলু চাষিরা বলছেন, সারা দেশে আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, আলু চাষিরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় এই মৌসুমে বেশি করে আলু চাষ করেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ও লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রোপণ করা বীজ আলুর ৭০-৮০ শতাংশ নষ্ট হবে। এ ছাড়া অবশিষ্ট আলুতেও আশানুরূপ ফলন হবে না। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদি হলে ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়বে। তবে পানি অপসারণ করা গেলে ক্ষতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এসব কর্মকর্তারা। সিরাজদিখার উপজেলার কোলা ইউনিয়নের নন্দনকোনা এলাকার আলু চাষি হাফেজ মাঝি জানান, টানা বৃষ্টিতে আলু খেতের রোপণ করা সব বীজ পচে যাবে। কারণ জমি নিচু হওয়ায় এরই মধ্যে জমিতে পানি জমে গেছে। এই জমাটবদ্ধ পানি অপসারণের সুযোগ নেই। চারিদিকে ভরাট করে পানি যাওয়ার রাস্তা আটকিয়ে ফেলছে। এজন্য আমরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। এ বছর আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত মুনাফার আশা করেছিলাম। তাই এ বছর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বেশি করে আলু রোপণ করেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেল। জৈনসার ইউনিয়নের হিরণ খিলগাঁও এলাকার আরেক চাষি মকবুল হাওলাদার জানান, বছরের এই সময়ে এতো বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। এমন টানা বৃষ্টির ফলে খেতের আলু নষ্ট হয়ে যাবে। সবেমাত্র কিছুদিন আগে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এখনও বৃষ্টি থামার লক্ষণ দেখছি না। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে খেতের পানি অপসারণের সুযোগ নেই। ফলে খেতের অনেক আলু বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে বিশাল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। শ্রীনগর উপজেলা বীরতার ইউনিয়নের তিনগাঁও এলাকার আলু চাষি জব্বার মিয়া বলছেন, একেবারে অসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা না। তবে এটা কৃষকদের জন্য বড় ধরনর দুঃসংবাদ। আর এটা আলু চাষের মৌসুম। আর মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেত্রের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সান্ত¡না রানী মন্ডল বলেন, জেলায় ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে রোপণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে এখানকার আলু খেত্রে অনেক ক্ষতি হবে। যদি খেত থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ করা সম্ভব না হলে, ব্যাপক হারে ক্ষতি হবে।