মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোন
পরিদর্শকের মামলা থেকে প্রধান দুই অভিযুক্তকে বাদ দিলেন উপ-পরিদর্শক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে কক্সবাজারের টেকনাফে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছিল হিরোইন, ইয়াবা, বিদেশি পিস্তল, তাজা কার্তুজ ও ম্যাগজিন। এ ঘটনায় সংস্থার টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বরে টেকনাফ থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে ৭ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে মাদক আইনের মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় সংস্থার টেকনাফ বিশেষ জোনের (উপ-পরিদর্শক) এসআই তুন্ত মনি চাকমাকে। অস্ত্র মামলাটি পুলিশ এখনো তদন্ত করছেন। দেড় মাসের মাথায় গত ১০ নভেম্বর মাদক মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। যেখানে এজাহারে অভিযুক্ত ১ এবং ২ নম্বর আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত রোববার কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা দায়েরা ও জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেন। যার সূত্র ধরে আদালত থেকে দাখিল করা অভিযোগপত্র, এজাহারসহ মামলার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টেকনাফ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোদার বিলের মোহাম্মদ সাজেদের ভাড়া করা বসতঘরে এক অভিযান চালানো হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজলের উপস্থিতিতে অভিযানে ৭০০ গ্রাম হিরোইন, ৫৩ হাজার ইয়াবা, ৩টি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, একটি বিদেশি পিস্তল, ১৪১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, তিনটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও ৭ জন পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যু বিহারী নাথ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বরে টেকনাফ থানায় ৭ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১নং আসামি টেকনাফ সদর ইউপির গোদার বিলের আবু সৈয়দের ছেলে আবদুল্লাহ, ২নং আসামি একই ইউপির উত্তর লম্বরির হোছন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল কাদের, ৩নং আসামি পশ্চিম গোদারবিলের ইমাম হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদ প্রকাশ শাহেদ, ৪নং আসামি পশ্চিম গোদারবিলের ইমাম হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সালেম প্রকাশ শাহ আলম, ৫নং আসামি দক্ষিণ লেঙ্গুরবিলের হোসাইন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সাদেক ওরফে সাদ্দাম, ৬নং আসামি দক্ষিণ লেঙ্গুর বিলের বশির আহমদের পুত্র আনোয়ার ও ৭নং আসামি গোদার বিলের কালা মিয়ার ছেলে মো. কাসিম। এর মধ্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে টেকনাফ থানায় জিআর মামলা নং-৬৯০, তাং- ২৫.০৯ ২০২৩ইং মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তুপ্ত মনি চাকমা। অপর অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলাটি টেকনাফ থানার এক কর্মকর্তার কাছে তদন্তাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে মাদক আইনের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক তুন্ত মনি চাকমা মামলার ১নং আসামি আবদুল্লাহ ও ২নং আসামি মোহাম্মদ আবদুল কাদেরকে বাদ দিয়েই দেড় মাসের মাথায় গত ১০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
অভিযোগ উঠেছে কোটি টাকার বিনিময়ে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি ১নং আসামি আবদুল্লাহ ও ২নং আসামি মোহাম্মদ আবদুল কাদেরকে বাদ দিয়েই দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অথচ এরা দুইজনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি মামলার চার্জশিট থেকে দুই আসামিকে বাদ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রকাশ্য দিনের বেলায় ঘরটি থেকে ৭ জন আসামি একে একে সবাইকে পালাতে দেখা গেছে স্পষ্টভাবে। বাদী মামলার এজাহারে তা উল্লেখও করেছেন, কিন্তু এমন কি ঘটনা হলো যে, তাদের বাদ দিতে হবে। এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমি ভাই অন্য এক অপারেশনে রয়েছি। পরে জানাব।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক তুন্ত মনি চাকমা বলেন, আমি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামির বিষয়ে জানতে পেরেছি যে, তারা ঘটনার সময় অন্যত্র অবস্থান করছিলেন। এমনকি আসামিরাও জানিয়েছেন যে, তারা ওই সময় রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন অভিযুক্তরা ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, এই সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তদুপরি আমি তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি মামলার বাদীকেও জানিয়েছি। অবৈধ লেনদেনের কথা তিনি অস্বীকার করেছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্ত চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজলের মুঠোফোনে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি নয় বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পরে ওই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্বিতীয় দফা ফোন রিসিভ করেননি।