মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে গতকাল দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। পরে মগবাজার গিয়ে এ শোভাযাত্রা শেষ হয়।
এর আগে সকাল থেকে শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর দুপুরে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের পরাজয়ের দিবসে পরিণত করেছে সরকার। এ সময় সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। একতরফা নির্বাচন বয়কট করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান তিনি।
দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঞ্চালনায় ও ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রায় সরকারের পতনসহ নানা দাবিতে স্লোগান দেন দলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে নয়াপল্টন এলাকায় মোতায়েন করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় কাকরাইল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত একপাশের রাস্তা।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর দলীয় মহাসমাবেশ প- হওয়ার ৪৮ দিন পর গতকাল দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
খোলেনি কার্যালয়ের তালা
দলের সংকটময় সময়ে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রার বড় শোডাউন করেছে বিএনপি। দীর্ঘদিন কর্মীশূন্য নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেতাকর্মীর ব্যাপক সমাগম হয়। তবে এত কিছুর পরও খোলেনি বিএনপি কার্যালয়ের তালা।
গতকাল বিজয় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে দুপুর ১২টার পর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফকিরাপুল মোড় থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানার হাতে অবস্থান নেন তারা। এ সময় নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগানসহ সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির বিজয় র্যালি শুরু হয়। উৎসুক কর্মীরা কার্যালয়ের বন্ধ গেটের সামনে বসে সেলফি তোলেন। তবে কার্যালয় কবে খুলতে পারে এ নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ভেতরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু কেন খোলা হচ্ছে না জানা নেই।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও সরেনি পুলিশ। মোতায়েন করা অতিরিক্ত পুলিশ চলে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ছোট টিম এখনও অবস্থান করছে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে। এর আগে, গত ২৮ অক্টোবর দলীয় মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর সমাবেশ প- হলে বিকাল থেকেই দলটির কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা।
২৯ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপি কার্যালয়ের তিন দিকে ‘ডু নট ক্রস– ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতা টানিয়ে দিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এরপর থেকে সেখানে সর্বক্ষণ অবস্থানে আছে পুলিশ।
বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ এবং সামনে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিএনপির কার্যালয়ে তালা মেরে রাখিনি। তাদের কার্যালয়ে তারা যেকোনো সময় আসতে পারবে। এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’