নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সারা দেশের মতো আমার নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে। নির্বাচনের সাড়া পড়ে গেছে। একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে, মুখরিত প্রচারণা চলছে, মানুষ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাবেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকার সুসমন্বিত উন্নয়নে বিশ্বাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জেটি ও টার্মিনাল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের সময় কমিয়ে পাঁচণ্ডছয় ঘণ্টার মধ্যে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ২০০১ সালে দেশে ভয়াবহ দুঃশাসন এসেছিল। যোগাযোগ তো দূরের কথা, মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করেছিল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস গ্রুপের সহায়তায় সারা দেশে ৫০০ স্থানে সিরিজ বোমা করেছিল। দেশের অর্থনীতি লুটেরাদের হাতে চলে গিয়েছিল। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিছু ব্যক্তির উন্নয়ন হয়েছিল। চরাঞ্চলের মানুষের কোনো আলো ছিল না। সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশে দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় সন্দ্বীপের যোগাযোগব্যবস্থা আজ উন্নয়ন করা হচ্ছে। সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। সন্দ্বীপে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি আছে। সন্দ্বীপের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী রাতে চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ‘বয়া’ বসানো হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, নতুন জেটি ও টার্মিনাল ভবনের মাধ্যমে সন্দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট গুছে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন এ জেটি নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে। পর্যটন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি সঞ্চারিত হবে। সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটি নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজটি করবে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। আজ বিআইডব্লিউটিএ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক এ এস এম আশরাফুজ্জামান এবং ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের পরিচালক তরফদার মো. রুহুল সাইফ। এ সময় অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সরকার দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের যাত্রীসাধারণের সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ, নৌ-পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিক ল্যান্ডিং সুবিধা প্রদান, ক্রমবর্ধমান বাল্ক কার্গো এবং পণ্য ও মালামাল লোডিং-আনলোডিংয়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ওই প্রকল্পের চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটি ও টার্মিনাল ভবনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ করা হবে। সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটিসহ ও টার্মিনাল ভবনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণে ৩৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে আরসিসি জেটি ও টার্মিনাল ভবনের পাশাপাশি বাউন্ডারি ওয়াল, পার্কিং ইয়ার্ড, তীররক্ষাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হবে। ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের জেটি নির্মিত হবে। সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের জন্য ২৫ দশমিক ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের সংস্থান রয়েছে। দোতলাবিশিষ্ট একটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোর হবে ২৭ হাজার ৭৭২ বর্গমিটারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ ডিসেম্বর ২০২২ চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।