তাইওয়ানের আসন্ন নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কেন না, এই ভোটের ফলাফল তাইওয়ান প্রণালীতে আঞ্চলিক উত্তেজনা কিছুটা কমানোর পাশাপাশি ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে আরো স্পষ্ট করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই খবর জানিয়েছে। এর আগে, গত সোমবার তাইওয়ানকে নিজেদের দ্বীপ হিসেবে চীনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের ‘পুনর্মিলন’ অনিবার্য। তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রদেশ বলে মনে করে চীন। প্রয়োজনে শক্তিপ্রয়োগ করে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে বা চীনের সঙ্গে একীভূত করতে পিছপা হবে বলেও সতর্ক করে আসছিলো দেশটি। গত মাসে, ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি গভীর কথোপকথনে অংশ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডন্টে শি জিনপিং। এটি ছিল এক বছরের মধ্যে তাদের মধ্যকার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। তখন তাইওয়ান ইস্যুতে নিজেদের দাবির বিষয়ে অনড় ছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বাইডেনকে শি বলেছিলেন, দুই দেশের মধ্যকার ভঙ্গুর সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক সমস্যা ছিল এই দ্বীপ। বেইজিংয়ের নীতি অনুযায়ী স্ব-শাসিত এই দ্বীপটি চীনের অংশ। দ্বীপটিতে ১৩ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এই মুহুর্তে আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনে তাইওয়ানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী উইলিয়াম লাই চিং-তে বিজয়ী হবেন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, লাইয়ের বিজয় তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে অব্যাহত উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করবে। কেননা, লাইকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে দেখে চীন। এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ররি ড্যানিয়েলস আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘তাইওয়ানের ভোটাররা যে প্রার্থীকেই পছন্দ করুক না কেন তাকে মোকাবিলা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ওয়াশিংটন। তবে বিভিন্ন সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ অবশ্যই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।’ তিনি আরো বলেন, চীনা সামরিক প্রতিক্রিয়া রোধে ‘উপযুক্ত রাজনৈতিক সংকেত’র জন্য কৌশলও বিবেচনায় রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে তাইওয়ানের ভোটাররা প্রথমবারের মতো ডিপিপি’র সাই ইং ওয়েনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করলে তাইওয়ানের ওপর চাপ বাডায় বেইজিং। এসময় তাইওয়ানের সঙ্গে সব অফিসিয়াল সংলাপ বন্ধ করে দিয়ে দ্বীপের চারপাশে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল চীন। এমনকি তাইপেইয়ের অবশিষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক মিত্রদেরকেও বেইজিংকে সমর্থন করতে উৎসাহিত করেছিল দেশটি। এদিকে, চীনের সঙ্গে সরকারী সম্পর্ক বজায় রাখলেও তাইওয়ানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি তাইপেইকে আত্মরক্ষার উপায় সরবরাহ করতে একটি আইনে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে দেশটি। গত বছরের আগস্টে দ্বীপটিতে লাখ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম এবং অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।