ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে তিনটি আসনে চার প্রার্থীর ভোট বর্জন

কক্সবাজারে তিনটি আসনে চার প্রার্থীর ভোট বর্জন

ভোটে কারচুপির অভিযোগ ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারের তিনটি আসনে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীসহ তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের মধ্যে কয়েকজন চলমান ভোট স্থগিত করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন। এ বর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হলো কক্সবাজারে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ।

দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের কার্যালয়ে এসে ভোট স্থগিত চেয়ে আবেদন দেয়ার পর চলমান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামুণ্ডঈদগাঁও) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের এ নেতা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ব্যারিস্টার মিজান গণমাধ্যমকে বলেন, কক্সবাজার-৩ আসনে ১৬৭টি কেন্দ্রের মাঝে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নেতৃত্বে ১৩০টি কেন্দ্র দখল করে ব্যালেটে জোরপূর্বক সিল মারা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়। আবেদনে ভোট স্থগিত করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামুণ্ডঈদগাঁও) আসনে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। ১৬৭টি ভোটকেন্দ্রের মাঝে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় ৩৬টি।

এ আসনের জাতীয় পার্টির এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল) ও বলেছেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে রামু উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা প্রভাব বিস্তারের তথ্য রয়েছে। কিছু কেন্দ্র দখলের খবরও পাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে দ্রুত নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়েছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি) বলেন, আমি ভোটের মাঠে রয়েছি। বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়া হচ্ছে। কিছু কর্মীদের মারধরও করা হচ্ছে। প্রভাব বিস্তার লক্ষণীয়।

এ আসনের প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।

অন্যদিকে, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। দুপুর ১টার দিকে উখিয়ায় তার নিজ অফিসে কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ভুট্টো বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে আমি ভোট পাব সেসব কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে, উখিয়ার জালিয়াপালং, রত্মপালং ও রাজাপালং ইউনিয়ন থেকে আমার সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। তাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

একই আসনে, একই ভাবে অভিযোগ তুলে বিকাল ৩টার দিকে ভোট বর্জন করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল বশর।

তিনি দাবি করেছেন, কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেয়া ও নজিরবিহীন অনিয়ম, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাত করে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তাই আমি এই ভোট বর্জন করলাম। কক্সবাজার-৪ এর সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উখিয়ার ইউএনও তানভির হোসেন জানান, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে বিষয়টি জানাননি। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী, ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। ভোট ডাকাতি বা অনিয়মের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল বশর (ঈগল), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব) মাঠে ছিলেন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন এবং মোট কেন্দ্র ১০৪টি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেছেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। পরাজয় জেনে বর্জনের কথা বলছেন অন্যপ্রার্থীরা। এদিকে, একই দিন তিনটার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কক্সবাজারের আলোচিত আসন চকরিয়া-পেকুয়ার (কক্সবাজার-১) স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি জাফর আলম। তিনি দাবি করেছেন মাঠে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত