শষ্যভান্ডার খ্যাত উত্তরের বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। বাজারে উঠেছে শীতকালিন বিভিন্ন ধরনে শাকসবজি। ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃদ্ধ সবজি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর জেলায় প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা শীতকালিন সবজি বাণিজ্যের আশা কৃষি বিভাগের। তবে কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বাড়ানো ও উন্নতজাতের বীজ সরবরাহ করা গেলে অর্থনীতিতে আরো সমৃদ্ধ হবে এ জেলা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার কৃষক শাকসবজির আবাদ করেছে। এ বছর ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৪ টন শাকসবজি উৎপাদনের আশা। জনপ্রতি প্রতিদিন সবজির চাহিদা ২৫০ গ্রাম। সে হিসেবে জেলার চাহিদা ৮৫ হাজার টন।
নওগাঁ সদর, বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে দেখা মিলবে শীতকালিন নানা জাতের শাকসবজি। এসব উপজেলায় শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, লাউ, লালশাক ও পালংশাকসহ অন্তত ২৫-৩০ ধরনের শাকসবজি চাষাবাদ হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষ লাভজনক। কীটনাশক ছাড়া এখন আর শাকসবজির চাষ কল্পনা করা যায় না। সবজি চাষে প্রতি বিঘাতে কীটনাশকে খরচ পড়ে অনন্ত ১২-১৪ হাজার টাকা। বেড়েছে সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি ও জ্বালানি খরচ। এতে করে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, আবার দামও পাওয়া যায় না। ফলে লাভের একটি অংশ চলে যায় কীটনাশক ব্যবহারে। কিন্তু এ নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। উৎপাদন খরচ কমাতে প্রয়োজন সচেতনতা।
নওগাঁ সদর উপজেলার শুকুর চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন- তার চাষের জমি চার বিঘা। যেখানে সারা বছর শিম, পটল, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির আবাদ করেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘাতে খরচ হবে অন্তত ৪০-৪৫ হাজার টাকা। যেখানে শিম বিক্রি হবে বিঘা প্রতি লক্ষাধিক টাকা। চার বিঘা জমিতে বছর শেষে বেচাকেনা হবে অন্তত ৪ লাখ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে প্রায় ২ লাখ টাকা।
আরেক কৃষক ছায়েদ উদ্দিন বলেন- সবজিতে প্রায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আর কীটনাশক ব্যবহার না করলে পোকার উপদ্রব হয়। আমরা সবজিতে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করি অধিকাংশ সময় কাজ করে না। পরে আবারো অন্য কোম্পানির কীটনশাক কিনতে হয়। এতে করে অর্থের অপচয় হয়। এভাবে আমাদের প্রায় বিড়ম্বনায় পোহাতে হয়। সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করা গেলে অর্থের অপচয় কম হতো। এতে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি আমরা লাভবান হতে পারতাম। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা তৈরি করা।
বর্ষাইল গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন- সারা বছরই বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করা হয়। হাট-বাজারে সবজি নিয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটে ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। একমাত্র আলু ছাড়া অন্য কোনো সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে লাভবান হওয়া যেত। এজন্য প্রয়োজন হিমাগার। যেখানে সংরক্ষণ করা গেলে ভালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি পাইকারি ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন- জেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রচুর পরিমাণে শাকসবজির আবাদ হয়। সারা বছরই এসব সবজি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমরা সরবরাহ করে থাকি। চলতি মৌসুমে ফুলকপি, লাউ ও শিম সরবরাহ করা হচ্ছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন- জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ২৫-৩০ ধরনের শীতকালিন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। জেলায় জনসংখ্যা বিবেচনায় সবজির চাহিদা রয়েছে ৮৫ হাজার টন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত সবজি চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ জেলায় প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা শীতকালিন সবজি বাণিজ্যের আশা। বলা যায় এ জেলায় শাক-সবজির ভান্ডার। কৃষি বিভাগ থেকে শাকসবজি চাষে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।