মানবদেহে ক্যান্সার নির্মূলের নতুন ইমিউন কোষের সন্ধান

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মানবদেহে একটি ইমিউন কোষের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা- যেটি অ্যালার্জি এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। সঙ্গে এই কোষটি ক্যান্সার নির্মূল এবং সার্স-কোভ-২-এর মতো ভাইরাসের সঙ্গেও লড়াই করতে সক্ষম। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কারণেই মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ঘটে। হিউম্যান টাইপ-২ ইনন্যাট লাইমফোইড সেলস (আইএলসি২এস) নামের এ ইমিউন কোষটি মানবদেহের বাইরেও প্রসারিত করা যায় এবং এটি টিউমারের টিকে থাকার সক্ষমতাকে পরাজিত এবং ক্যান্সার কোষকে নির্মূল করতে পারে। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই তথ্য পেয়েছেন মার্কিন গবেষকরা। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সেলে’ এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সিটি অব হোপের- হেমাটোলোজি অ্যান্ড হেমাটোপোয়েটিক সেল ট্রান্সপ্ল্যানটেশন বিভাগের প্রফেসর জিয়ানহুয়া ইউ এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘কোষ পরিবারে আমরা আইএলসি২ কোষকে নতুন সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছি যেটি যে কোনো ধরনের ক্যান্সারকে সরাসরি নির্মূলে সক্ষম। যার মধ্যে রক্তের ক্যান্সার এবং সোলিড টিউমারও রয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে এই কোষ উৎপাদন, ফ্রিজিংয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা এবং রোগীদের দেহে প্রয়োগ করা যাবে। টি-কোষভুক্ত থেরাপি যেমন সিএআর টি কোষ, যেটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে রোগীর নিজস্ব কোষের প্রয়োজন হয়- আইএলসি২এস কোষের ক্ষেত্রে এমনটি প্রয়োজন হবে না। এই কোষ শারীরিকভাবে সুস্থ কোনো দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। যেটি অ্যালোজোনিক হিসেবে আলাদা বিশেষ চিকিৎসাগত পদ্ধতি হবে। যা খুব সহজেই পাওয়া যাবে।’ এর আগে ইঁদুরের আইএলসি২এস কোষ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। তবে ইঁদুরের কোষের পরীক্ষায় ক্যান্সার নির্মূলের ক্ষেত্রে ওই সময় আশাব্যঞ্জক কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেহের আইএলসি২এস কোষ সরাসরি ক্যান্সার নির্মূলে কাজ করে। কিন্তু ইঁদুরের কোষ সেটি করতে পারে না। মানবদেহের আইএলসি২এস কোষ পরীক্ষার জন্য প্রফেসর ইউ এবং তার দল প্রথমে একটি রক্তের নমুনা থেকে এই কোষকে আলাদা করেছেন। তারা অভিনব একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। যেটি মানবদেহ থেকে সংগ্রহ করা আইএলসি২এস কোষকে ২০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। এরপর তারা বাহ্যিকভাবে প্রসারিত করা এই কোষ সোলিড টিউমারে আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে প্রবেশ করিয়েছেন। যারমধ্যে রয়েছে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও গ্লিওব্লাস্টোমা। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই প্রসারিত কোষ এসব টিউমারকে নির্মূল করতে পারে। প্রফেসর ইউ বলেছেন, ‘একটি সন্তোষজনক সরাসরি প্রমাণ আমরা পেয়েছি যখন আমরা একটি আইএলসি২ কোষ এবং একটি টিউমার কোষ একসঙ্গে স্থাপন করেছি এবং দেখতে পেয়েছি টিউমার কোষটি নির্মূল হয়ে গেছে, কিন্তু আএলসি২ কোষটি অক্ষত রয়েছে।’ ‘এটি প্রমাণ করে অন্যান্য কোষের অনুপস্থিতিতে আইএলসি২এস কোষ সরাসরি ক্যান্সার কোষটিকে নির্মূল করেছে।’ যোগ করেন প্রফেসর ইউ। ক্যালিফোর্নিয়ার হেমাটোলোজি অ্যান্ড হেমাটোপোয়েটিক সেল ট্রান্সপ্ল্যানটেশন বিভাগের অপর গবেষক প্রফেসর মাইকেল ক্যালিজিউরি বলেছেন, ‘আইএলসি২এস কোষটি মানবদেহে খুবই বিরল। এটি বেশিরভাগ পাওয়া যায় ফুসফুস, নাড়িভুঁড়ি এবং ত্বকে।’ তবে প্রফেসর ইউ জানিয়েছেন, আইএলসি২এস কোষটি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর নিজস্ব কোষ থেকে নিতে হবে না। অর্থাৎ ক্যান্সার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এই কোষ অন্য সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। ক্যালিফোর্নিয়ার এ গবেষক বলেছেন, ‘আমরা এই গবেষণাটির ফলাফল প্রয়োগের স্বপ্ন দেখি। এমনকি ক্যান্সারের বাইরে অন্য রোগের ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। আইএলসি২এস কোষ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও- যেমন কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।’