দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ভুট্টা আলু সরিষা গমসহ বিভিন্ন রবি ফসলের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। ঘোড়াঘাটের করতোয়া নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে ভুট্টাচাষের বিপ্লব ঘটিয়েছে চরের কৃষকরা। ভুট্টাচাষে বদলে গেছে এসব এলাকার মানুষের জীবন চিত্র। উপজেলায় এবার প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে কৃষি বিভাগ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে ভুট্টাচাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এক লাখ তিন হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। তার মধ্যে ভুট্টা ১ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আলু ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর, গম, ৮১ হেক্টর, শাকসব্জি ৬৩০ হেক্টর ও মূর্য্যমুখী ১০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৯০ হেক্টর ও রসুন ৪০ হেক্টর, মরিচ ২৫ হেক্টর, জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। ঘোড়াঘাটের বিভিন্ন চরাঞ্চলের ৯ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৮ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফসলের আবাদ করা হয়ে থাকে। এসব জমির বেশিরভাগ অংশেই চাষ হচ্ছে ভুট্টা। উপজেলার ভুট্টাচাষ শুরু হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০০১ সালের দিকে। মাত্র ১০০০ হেক্টর জমি দিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু হয়।
এরপর থেকে ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বাড়তে থাকে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভুট্টা চাষ। অন্যতম রবিশস্য ভুট্টা, যা সম্প্রতি এ অঞ্চলের ব্র্যান্ডিং পণ্য বলে খ্যাত। সরেজমিন ঘোড়াঘাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুলারকীপুর থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে। করতোয়ার দুই তীরে এক সময় দেখা যেত শুধুই রাশি রাশি বালু, সেখানে ফসল ফলানো ছিল চিন্তারও বাইরে। নদীতে ভিটে-বাড়িসহ ফসলি জমি হারানো মানুষের দুঃখ কষ্ট ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। চরের জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কাটিয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু সেখানে আজ সবুজের সমাহার, ভুট্টা খেতে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায়, শুধু চরাঞ্চলেই নয়, ঘোড়াঘাটের সর্বত্র এখন চাষ হচ্ছে এই ভুট্টা। ভুট্টা চাষের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা। তবে কৃষকদের দাবি, এখানে সরকারিভাবে ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র চালু করা হলে, তারা পাবেন ন্যায্যমূল্য।
উপজেলার ভর্নাপাড়া এলাকার মাসুদ বলেন, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা ন্যায্য দাম পাই না। তাছাড়া এবার সার ও বীজের দাম অনেক বেশি। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে করতোয়া তীরবর্তী চর এলাকায় ব্যাপক ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। এলাকার মানুষ ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে আবাদ করে। এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে সরকারিভাবে ভুট্টাকেন্দ্রিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা বলেন, এ উপজেলার ভুট্টা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। কৃষকরা এখন চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমরা তাদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।