জনকল্যাণ নিশ্চিতে জলাভূমি সংরক্ষণের দাবি

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ন, দখলদারিত্ব ও ভরাটের কারণে দেশের জলাভূমিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। যার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্যব্যবস্থা ও পরিবেশের ওপর। বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। পানিকে কেন্দ্র করে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এসডিজিতেও জলাভূমি রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জনকল্যাণ নিশ্চিতে এবং জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলাভূমি রক্ষার বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষ্যে রিভার ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনকল্যাণ নিশ্চিতে সব জলাভূমি দখল ও দূষণমুক্ত করা হোক’ শীর্ষক কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। কর্মসূচি থেকে বছিলা ব্রিজ থেকে গুদারাঘাট কলাতিয়া পর্যন্ত পরিদর্শন করা হয়। বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রিভার ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মো. এজাজ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, স্বপ্নের সিঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংগঠনের উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্ত বায়ু সংস্থার সদস্য সচিব মো. সেলিম এবং মো. মানিক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- আরডিআরসি ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কর্মকর্তাবৃন্দ। পরিদর্শন কর্মসূচি থেকে দেখা যায়, বছিলা ব্রিজ থেকে গুদারাঘাট কলাতিয়া পর্যন্ত অঞ্চলে একাধিক ইটের ভাটা রয়েছে এবং বুড়িগঙ্গা নদীর পানি শিল্প দূষণের প্রভাবে কালো হয়ে গেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্যের কারণে নদীটি পর্যুদস্ত অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন প্রাইভেট হাউজিং কোম্পানিও আবাসন তৈরির জন্য নদীটি দখল করে নিচ্ছে। কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেন, সদিচ্ছা থাকলে এখনো নদীটি উদ্ধার করা সম্ভব। ঢাকার ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটি রক্ষা করতে হবে। পরিদর্শন পরবর্তী সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ জলাভূমিতে বছরের অর্ধেক সময় শস্য উৎপাদন হয় এবং বাকি সময় মাছ চাষ হয়ে থাকে। জলাভূমিতে চাষ হওয়া মাছ আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রোটিনের উৎস। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আমাদের নদী-জলাভূমিগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাদ্য নিরাপত্তা- সবই হুমকির সম্মুখীন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের ১৪টি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গেই জলাভূমির সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে সরকারকে জলাভূমি রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭১ সালে ইরানের রামসারে ‘রামসার কনভেনশন’ চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলাভূমি রক্ষার অঙ্গীকার করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওড় রামসার সাইট বলে স্বীকৃত। অবৈধ কারেন্ট জাল ও প্লাস্টিক চাঁইয়ের ব্যবহার, ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ চলাচল, পর্যটকদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে হাওরে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণে। যথেচ্ছ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও বাঁধ নির্মাণ বন্ধ, পর্যটকদের ভ্রমণের স্থান নির্ধারিত করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ ও কঠোর বাস্তবায়ন করা না হলে হাওড়টি বাঁচানো সম্ভব নয়। সম্প্রতি নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে জলাভূমিগুলোকেও জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা সময়ের দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে সেভাবে ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতে আমাদের অধিকাংশ জলাভূমি বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা, ঝড়ের সময় সুরক্ষা, ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জলাভূমি পালন করে।