ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটিকে বিতর্কিত করার ‘চেষ্টায়’ বিতর্কিত শান্ত

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির (ডিউডিএস) আসন্ন নির্বাচন বর্জন করে সংগঠনকে বিতর্কিত করার অভিযোগ উঠেছে নানা অপকর্মে বিতর্কিত সূর্যসেন বিতর্কধারার সভাপতি ও হল ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক তানভীর হোসেন শান্ত এর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত শান্ত আসন্ন ১৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আদেশ অগ্রাহ্য করে নির্বাচন বর্জন করে সংগঠনকে বিতর্কিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৮টি হলের একজন করে ভোটার ভোট দিতে পারেন। আসন্ন নির্বাচনে অধিকাংশ হল ফর্ম তুললেও শান্তসহ তার সমমনা কয়েকজন হল ডিবেটিং ক্লাবের নেতা নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে শীর্ষ পদপ্রার্থী শান্ত এই পথ বেছে নিয়েছেনে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, কলেজ জীবন থেকেই নেতিবাচক বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না শান্তর। কলেজ জীবন থেকেই ডিবেটিং ক্লাবের নেতৃত্বে আসতে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য মতে, ডিবেটিং ক্লাব অব রউফ কলেজ (ডিসিআরসি) এর সভাপতি থাকাকালীন ‘ঘৃণা ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে উস্কে দেওয়া’, ‘নবীন ও কতিপয় প্রবীণ সদস্যের মধ্যে দলগত রাজনীতির উন্মেষ ঘটানো’, ‘কতিপয় অনুজ সদস্যের মধ্যে অন্যায়মূলক সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তা প্রদানে বাধা দিলে অন্যান্য দায়িত্বরত কার্যপরিষদের সদস্য ও অনুজদের ক্লাব এবং বিতর্ক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে মর্মে অনৈতিক হুমকি প্রদান’ এর কারণে শান্তকে ২০১৯ সালে ডিসিআরসি অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। বিতর্ক কর্মশালার নামে কলেজ প্রাঙ্গণের বাইরে বিভিন্ন স্থানে নবীন ও প্রবীণ বিতার্কিকদের ডেকে হেনস্থা করা, ক্লাবের কতিপয় অগ্রজের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং অন্যায়ের বিরোধিতাকারীদের হেনস্থা, আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল ভাষার ব্যবহারসহ পূর্ব হুমকিস্বরূপ একাধিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অন্যায়ভাবে ডিসিআরসিকে বঞ্চিত করার প্রয়াস চালানোর অভিযোগও ছিল শান্তের বিরুদ্ধে। শান্তকে সে সময় অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ডিসিআরসির ফেসবুক পেইজে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নোটিশ প্রকাশ করা হয় যা এই প্রতিবেদন লেখা অবধি পেইজে দেখা যায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলের বিতর্ক ক্লাবেও সভাপতি হওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘোষিত কমিটিকে অমান্য করে ক্লাবে তালা লাগান শান্ত। এসময় তিনি তৎকালীন ক্লাবের মডারেটরসহ অন্যান্য শিক্ষকদের পথরোধ করে লাঞ্চনা করেন বলেও অভিযোগ ছিল। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে কোনরূপ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সূর্যসেন বিতর্ক ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন হোসেনকে বহিষ্কারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে শান্তর বিরুদ্ধে ঢাকা মেডিকেলের সামনে ভাসমান দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। টাকা পরিশোধ না করায় রবিউল নামের এক দোকানিকে হুমকি দেওয়ার একটা অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে আছে। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার ডিউডিএসের বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন তারিখ ঘোষণার পরপরই বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শান্ত। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক এবং বর্তমান বিতার্কিকরা। জানা যায়, শান্ত এবং তার সহযোগীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ডেবেটিং সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টাকে বিব্রত করতে সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ইউ-টার্ন নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। শান্ত-এর অভিযোগ নির্বাচন পদ্ধতি পক্ষপাতদুষ্ট। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক হলের অংশগ্রহণে এই পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয়ে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিতার্কিক জানান, শান্ত গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হলে তার নিশ্চিত হার হবে জেনে বর্জনের পথ অবলম্বন করে অস্বাভাবিক উপায়ে নেতৃত্বে আসতে চান যেভাবে এর আগে সূর্যসেন বিতর্ক ধারায়ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৩ তারিখ নির্বাচনের দিনধার্য করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক বিতার্কিক বলেন, শান্ত-এর স্বভাব পরিবর্তন হয়নি। কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন ক্লাবের নেতৃত্বে আসার জন্য তার যে নীতিবিবর্জিত কাজ তা আমরা শুনেছিলাম। পরবর্তীতে সূর্যসেন বিতর্কধারার গত কমিটি গঠনের সময় তার প্রতিফলন দেখেছি। এবার ডিউডিএসের মত একটা প্রেস্টিজিয়াস জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। ডিউডিএসের মত একটা পবিত্র অঙ্গনকে এভাবে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করছে দেখে খারাপ লাগছে। শুনেছি সাবেক গুটিকয়েক বড় ভাই তাকে সাহায্য করছে। ডিউডিএসের বর্তমান সভাপতি মাহবুব মাসুম বলেন, নির্বাচন ঘিরে যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারেই অমূলক। বিগত এক দশক ধরে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়ে আসছে ঠিক সেভাবেই এবারের নির্বাচনও হচ্ছে। সুতরাং আগের নির্বাচনগুলো যদি ফেয়ার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এই নির্বাচনও ফেয়ার হবে। নির্বাচন আমাদের একক কোনো সিদ্ধান্তে হয় না, বরং অনেকগুলো স্টেকহোল্ডাের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আমরা নির্বাচন আয়োজন করে থাকি। তিনি বলেন, এজিএম হয়ে যাওয়ার পর সংগঠনের গনতান্ত্রিক কার্যাবলীকে অমান্য করে এধরনের পদক্ষেপ একেবারেই সংগঠনকে বিতর্কিত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস। মাসুম আরো বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে প্রায় এক মাস আমাদের কাজে কিছুটা বাধা ছিল। সেকারণে আমাদের একটি বড় প্রোগ্রাম আয়োজনের কথা ছিল চলতি মাসের ১৬ তারিখে। কিন্তু তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ও ভিসি মহোদয়ের পরামর্শে আমরা গঠনতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন ঘোষণা করি। ডিউডিএসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন জানান, ডিবেটিং সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল স্যারের নির্দেশনায় গঠনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ। সঠিক সময়ে ডিবেটিং সোসাইটির চিফ মডারেটর এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড মাহবুবা নাসরিন ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সব হলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে বলে আমি মনে করি।