কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার দে’র বিরুদ্ধে খামারিদের প্রশিক্ষণের নামে প্রাণিসম্পদ ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) লাখ লাখ টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী খামারিদের কম টাকায় নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে মোটা অংকের টাকা তছরুপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তার নিজ জেলা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় বাড়ি এবং পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলেছেন।
জানা যায়, পিজি ও নন পিজি ৪টি ধাপে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে ডে-১১-এর মোট বাজেট ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকা। মোট পিজি সংখ্যা-১৪টি। মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪৩ জন। প্রতিজন পিজি সদস্যর দুপুরের খাবার বিরিয়ানি, নাস্তা, পানি, খাতা কলম ও ফোল্ডার বাবদ সরকারিভাবে খরচ ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। এই খাতে মোট সরকারি হিসেবে খরচ দেয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকারও বেশি। মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এই খাতে খরচ করা হয়েছে বিরিয়ানি ১৪০ টাকা, পানি ৮ টাকা নাস্তা ১৭ টাকা, খাতা কলম ও ফেল্ডার বাবদ ২৫ টাকাসহ মোট ১৯০ টাকা। এই খাতে তিনি খরচ করেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ১৭০ টাকা। সব কিছু বাদ দিয়ে তার কাছে অবশিষ্ট রয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। একইভাবে পিজি ডে-১২-তেও সব খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। ডে ১১ ও ডে-১২ তে মোট ২ লাখ ২৮ হাজার টাকার বেশি তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে পিজি ডে-১৩ (বর্তমান চলমান রয়েছে) এখানেও সমপরিমাণ টাকা তছরুপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এছাড়া নন পিজি অর্থাৎ বিজিনেস প্লান বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর সরকারি বাজেট রয়েছে মোট ১৮ লাখ টাকা। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মোট সদস্য সংখ্যা ৬০০ জন। প্রতিজন সদস্যের ব্যাগ, খাতা, কলম বাবদ সরকারিভাবে বাজেট ধরা হয়েছে ১ হাজার টাকা হারে ৬০০ জনের মোট ৬ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিটি ব্যাগ, খাতা, কলম বাবদ তিনি ক্রয় করেছেন ব্যাগ ২০০ টাকা, খাতা ১০ টাকা, কলম ৫ টাকা। মোট ২১৫ টাকা হারে ৬০০ জনের ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। অবশিষ্ট রয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকার মতো। এছাড়া প্রতিদিন প্রতিজনের দুপুরের খাবার বাবদ বাজেট ৫০০ টাকা করে ২ দিনে ১ হাজার টাকা। ৬০০ জনের মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। সেখানে তিনি খাবার (বিরিয়ানি) ক্রয় করেছে জনপ্রতি ২ দিনে ৪০০ টাকা হারে ৬০০ জনের মোট খরচ করেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অবশিষ্ট রয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই খাতে ব্যাগ ও খাবার ক্রয়ে সব কিছু বাদ দিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা মতো তছরুপ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য খামারিরা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের নাম বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা তিনি নয়-ছয় করছেন। বিজনেস প্লানে দুই দিনের প্রশিক্ষণে ব্যাগ ও খাবারে বাজেট ছিল ২ হাজার টাকা। অথচ দুই দিনে খাবার দেয়া হয়েছে ৪০০ টাকার ও ব্যাগ দেয়া হয়েছে ২০০ টাকার। বাকি ১৪০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া প্রকৃত খামারিদের অনেকেরই এই প্রশিক্ষণে নেয়া হয়নি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তার চাকরির দ্বিতীয় কর্মস্থল অভয়নগর নোয়াপাড়া যশোর সোনালী ব্যাংক হতে তিনি ১০ লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে থাকাকালীন ২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৮ লাখ টাকা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে যোগদানের পর পরিশোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার দে জানান, কোনোভাবেই প্রশিক্ষণরত খামারিদের ঠকানো হয়নি এবং বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা প্রশিক্ষণরত খামারিদের মধ্যে বুঝে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।