শীতের দেশের টিউলিপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেঁতুলিয়া
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ ছাউনির নিচে সারি সারি ফুটেছে টিউলিপ। কোনোটা সাদা, কোনোটা লাল, সঙ্গে রয়েছে হলুদণ্ডগোলাপীও। একেকটি ফুলের বাহারি রঙে রাজসিক সৌন্দর্যের এ ফুল ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। শীতের দেশের এই টিউলিপ তৃতীয়বারের মতো আবারও ফুটেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আর তার সৌন্দর্য দেখতে দর্শনার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। কেউ ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন আবার কেউ ভিডিও কলে বন্ধু-স্বজনদের দেখাচ্ছেন টিউলিপের সৌন্দর্য। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে যেন জমিনে নেমে এসেছে এক খণ্ড রংধনুর গালিচা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তের দর্জিপাড়া গ্রামে দুই ধাপে সফলতার পর তৃতীয়বারের মতের আবারও চাষ হয়েছে এই ফুল। ফুল ফোটার পর এই ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে দেড়শ’রও বেশি প্রজাতির টিউলিপ চাষ হয়। এর মধ্যে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার বীজ বোনা হয়েছে দর্জিপাড়া গ্রামে। গত বছর লাভের মুখ দেখে তেঁতুলিয়ার মাটিতে এ ফুল নতুন করে চাষ করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক আয়ে ঘুরেছে তাদের সংসারের চাকা। টিউলিপ বাগান ঘুরে দেখতে গিয়ে কথা হয় ঠাকুরগাঁও থেকে ঘুরতে আসা সুরাইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, মোবাইলে অনেকবার দেখেছি এই ফুল। এবার প্রথম তেঁতুলিয়ায় এসে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হলো। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা এলাকার মিম মিশালী বৃষ্টি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ফুলের ছবি দেখে আসছি। অবশেষে বান্ধবীদের সঙ্গে প্ল্যান করে আজ এই ফুল দেখা হলো। খুব ভালো লাগছে ভিনদেশি এমন ফুল নিজ এলাকায় দেখতে পেয়ে। তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে আসা সাঈফুল ও কল্পনা দম্পতি বলেন, অনেক নাম শুনেছি টিউলিপের। তাই আজ এই ফুল দেখতে আসলাম। অনেক ভালো লাগছে। আমরা তিনটি টিউলিপ ফুলের টপ কিনেছি বাড়িতে নেওয়ার জন্য। সাধারণত এই ফুল দেখতে বিদেশে ছুটে যায় দেশের মানুষ। তবে নিজ দেশের মাটিতে এই ফুল চাষ হওয়ায় অনেককে বিদেশের পরিবর্তে উত্তরের এ জনপদ টানছে। এ বিষয়ে কথা হয় নারী উদ্যোক্তা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবার লাভের মুখ দেখে এবার আমরা ১৬ জন উদ্যোক্তা নতুন করে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার টিউলিপের বাল্ব রোপণ করেছি। আশা করছি গতবারের থেকে এবার আরও ভালো দাম পাব। উদ্যোক্তা নারগিস বেগম বলেন, একটা সময় আমরা শুধু বাড়ির কাজ করতাম। এখন এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমাদের পুরুষদের পাশাপাশি নিজস্ব কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান দম্পতি ড. এম খায়রুল হোসেন ও সাবেরা সুলতানা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম দেশের মাটিতে টিউলিপ চাষ করা সম্ভব না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইএসডিও এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। অনেক ভালো লাগছে, এমন একটি এলাকায় এই ভিনদেশি ফুল চাষ হচ্ছে। তাও আবার বাণিজ্যিক আকারে। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) পরিচালক ডা. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য অর্জন করেছি। আসলেই তেঁতুলিয়ার মাটি টিউলিপের জন্য উপযোগী। আর এই টিউলিপ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। টিউলিপ চাষ করে এখানকার নারীরা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। এখন তারা নিজেও আয় করছে। সাধারণ ফসলের খেতে আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, সেই খেতেই আমরা টিউলিপের চাষ করছি।
এছাড়া দেশে ফুলের বাজারও প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ফুল বাজারজাত করে কৃষকরা অতি দ্রুত লাভবান হচ্ছেন। তেঁতুলিয়ার মাটিতে এবার ১৬ জন নারী উদ্যোক্তা পিকেএসএফের অর্থায়নে ইএসডিওর সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করছেন। প্রথম পর্যায়ে ১৫ শতক জমির পরিবর্তে দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই একর জমিতে টিউলিপের চারা রোপণ করেন। তৃতীয়বারের মতো আবারও টিউলিপ বাল্ব রোপণ করেন লাভের আশায়। শীতপ্রধান দেশে টিউলিপ হরহামেশাই দেখা গেলেও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এটি তেমন একটা দেখা যায় না। টিউলিপ চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল ধরা হয়। আর টিউলিপের বাল্ব রোপণের ২২ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। এদিকে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একেকটি টবসহ ফুল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।