সংবাদ প্রকাশের জের

মহেশখালীতে সাংবাদিক ডেকে হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক কালবেলা ও দৈনিক দৈনন্দিনের কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে মুঠোফোনে হুমকির পর ডেকে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর ও হাত-পা কেটে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘সুমিতমো’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা মশিউর রহমান (৩৯) নামের এক ব্যক্তি। গত রোববার রাতে মাতারবাড়ীতে দুই দফায় সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ’র সাথে এমন ঘটনা ঘটান ওই ব্যক্তি। প্রথমে সাইরার ডেইল কর্মচারী কোয়ার্টার ও পরে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অভ্যন্তরে টেকলিন নামের একটি কোম্পানির অফিসে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই ব্যক্তি। এই ঘটনার পর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত মঙ্গলবার মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রকিয়ত উল্লাহ।

জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মাতারবাড়ীতে স্থানীয় কিছু জমি মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিলের টাকা না দেওয়ার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন রকিয়ত। সংবাদ প্রকাশের পর তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ০১৭১৭-০৭৪৪১৭ থেকে কল করে একের পর এক হুমকি ও মন্দকথা বলতে থাকেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি ভুল বোঝাবোঝির দাবি করেন তিনি। এমতাবস্থায় নুর হোসেন সোহেল নামক ব্যক্তির মাধ্যমে সেটি অবসান করার কথা বলে রকিয়তকে তাদের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে একটি কালো গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় তাকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে টেকলিন নামের একটি কোম্পানির অফিসের সামনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবারও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ শুরু করে এবং একপর্যায়ে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে রকিয়তের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়া দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ দেশের বিভিন্ন বিতর্কিত ধর্ণাঢ্য ব্যক্তির সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে দাবি করে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ারও উপর্যুপরি হুমকি দেয়। এ অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার পর প্রথমে বদরখালীর একটি হাসপাতাল ও পরে মহেশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে ট্রমা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিক রকিয়ত নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় ‘চুক্তির মেয়াদ শেষ, জমিতে নির্মিত অবকাঠামো লুটপাট করতে মরিয়া রানা সিন্ডিকেট’ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে জমির মালিকের সাথে চুক্তি নবায়ন না করে আইএইচআই কোম্পানি তাদের নির্মিত অবকাঠামোসহ নানা জিনিসপত্র টেকলিন কোম্পানিকে হস্তান্তর করে দেয়। কিন্তু টেকলিন কোম্পানির সেফটি অফিসার রানাসহ একটি সিন্ডিকেট ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এরই মধ্যে অবকাঠামোগুলো ভেঙে ফেলে মালামাল লুটপাট করতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে তুলে ধরা হয়। সংবাদটিতে সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে সকল পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্ত সংবাদে উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও মশিউর রহমান নামের ওই ব্যক্তির ভাড়াটিয়া স্টাইলে হুমকি দিয়ে ক্ষমতাধর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন। বিদ্যুৎ প্রকল্পের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওই ব্যক্তি ওই পদে বর্তমানে নেই, সাবেক পদবিধারী।

এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, সংবাদ প্রকাশে কোনো অসংগতি থাকলে অভিযুক্তদের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি পাঠানো কিংবা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় কোনো ব্যক্তি ওই সংবাদকর্মীকে হেনস্থা বা আটকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। আমরা তাকে আটকিয়ে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। একই সাথে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুমিতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো প্রকার হুমকি দেয়নি বলে জানান। তবে বক্তব্যের একপর্যায়ে রকিয়ত উল্লাহ’র করা প্রতিবেদনটি সত্য ছিল বলে স্বীকার করে নেন।