পঞ্চগড়ে নতুন স্বপ্ন জাগাচ্ছে কফি চাষ

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয় হলো কফি। বাংলাদেশেও কফি চায়ের মতোই জনপ্রিয়। তবে চায়ের তুলনায় দাম বেশি। সেই কফি বাণিজ্যিকভাবে আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। চা শিল্পখ্যাত এ জেলায় কৃষিতে নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে যোগ হয়েছে কফি চাষ। সমতলে ছায়াযুক্ত মাটিতে সাথী ফসল হিসেবে আবাদ শুরু হয়েছে নতুন ফসলটি। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ, লাল ও কাঁচা হলুদ রঙের ফল। সাথী ফসল হিসেবে কফি আবাদ কৃষকদের দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। তবে কফির প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে এই কফি চাষ। জেলার তিনটি উপজেলায় (পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) ২৬ হেক্টর জমিতে কফি ও কাজু বাদাম আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৪টি প্রদর্শনীতে ৭৪ জন চাষি কফি আবাদ করছে। চাষিরা কফিকে সাথী ফসল হিসেবে ছায়াযুক্ত জায়গায় আবাদ করছেন। দুই বছরের মধ্যে বাগানের গাছগুলোতে ফল ধরেছে। কিছু কিছু গাছে ফল পেকেছে। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলার সব কফি গাছগুলোয় ফল চলে আসবে। জানা যায়, পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি আবাদ হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রধান কফি উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভারত, ইন্দেনেশিয়া, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, গুয়েতেমালা প্রভৃতি। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে কফি। দেশে অ্যারাবিকা ও রোবস্তা নামে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি কফি চাষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের আবহাওয়া রোবস্তা কফি চাষের উপযোগী। ছায়াযুক্ত স্থান ছাড়া কফি চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, কফির চারার ওপর রোদ পড়লেই চারা নষ্ট হয়ে যায়। তবে ৫ বছর পর পুরোপুরি ফল আসা শুরু করলে চারাগুলো ততদিনে রোদণ্ডসহনশীল হয়ে যায়। এটি রুবিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চিরসবুজ ও ছোট বৃক্ষ জাতীয় গাছ। পাতা সরল, চওড়া, গাঢ় সবুজ বর্ণের। জেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিশমনি এলাকায় কফি আবাদ করছেন আবদুল হালিম প্রধান নামের এক কৃষক। তিনি বাড়ির পাশে ৩৩ শতাংশ জমিতে লাগিয়েছেন ১৩৫টি গাছ। এসব কিছু গাছে ফল ধরে পাকতে শুরু করেছে। বাকি গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। ফল ধরলেও দুঃশ্চিন্তায় আছেন হালিম প্রধান। কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি জানা না থাকায় গাছ থেকে তোলা পাকা ফল রোদে শুকাচ্ছেন। এ চাষির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কফির চারাগুলো দেখতে অনেকটা দেবদারু চারার মতো। ছায়াযুক্ত জায়গায় রোপণকৃত ১৩৫টি গাছের মধ্যে বেশ কিছু গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল। কফির পাকা ফল টকটকে লাল, আবার কোনোটা কাঁচা হলুদের মতো। তাকে বেশ কিছু পাকা ফল তুলে রোদে শুকাতে দেখা যায়। জেলার সদর উপজেলার কফি চাষ করছেন আরেক চাষি মুনাইম। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় ২০২১ সালে এক বিঘার মতো জমিতে কফি চারা রোপণ করেছিলাম। সাথী ফসল হিসেবে সুপারি বাগানে ১২৫টি কফি গাছ রোপণ করি। কৃষি অফিস আমাকে কফির চারা, সার, কীটনাশক দিয়েছিলেন। বাড়তি কোনো খরচ না হলেও সেচ বাবদ আমার ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। রোপণের ২ বছর হতেই বাগানের গাছগুলোতে ফল এসেছে। দুই বছরেই প্রতি গাছ থেকে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির মতো ফল পাচ্ছি। আশা করছি গাছগুলো পাঁচ থেকে ছয় বয়স হলে প্রতি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল পাব। যেহেতু নতুন লাগিয়েছি।