রবিতে ‘রবীন্দ্রনাথের গান

‘সুরের প্রয়োগ বৈচিত্র্য’ সেমিনার

প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রবীন্দ্রনাথের গান : সুরের প্রয়োগ বৈচিত্র্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবির অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এ গত সোমবার দুপুরে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রবির উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম। তিনি বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাকাব্য ছাড়া সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেননি; এমন কোনো অনুভূতি নেই, যে অনুভূতিটি আপন সৃষ্টিকর্মে প্রকাশ করতে সক্ষম হননি। সাহিত্যের সব অঙ্গনে সদর্প বিচরণ থাকলেও সর্বসাধারণের নিকট সংগীতের রবীন্দ্রনাথই সর্বাধিক জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথের গান বাঙালির পরম সম্পদ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের গান থেকে প্রেরণা ও ভালোবাসার পরশ লাভ করি। বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষার সৌভাগ্য যে, তিনি আমাদের ভূখণ্ডে জন্মেছেন এবং আমরা তাকে আপনজন হিসেবে পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ সকল ভেদাভেদ ভুলে সুরসাগরে বিচরণ করেছেন। পৃথিবীর সকল সুরসম্পদকে তিনি আপনার মনে করে তা থেকে আহরণ করেছেন, প্রয়োজনে অবগাহন করেছেন, প্রাপ্ত সম্পদ মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্র সংগীতে সুর বৈচিত্র্যের কারণ আছে; রবীন্দ্র প্রতিভার আবির্ভাবের প্রেক্ষাপটটি ছিল ভিন্ন, তখন স্বদেশি চেতনার উন্মেষ ঘটতে আরম্ভ করেছে এবং আমাদের লোকজ সংস্কৃতির প্রভাবে নাগরিক জীবনে সৃষ্ট অভিঘাতের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। সেইসাথে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রভাবও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে এ সকল ধারার মিশ্রণে নূতনত্ব ও বৈচিত্র্য এসেছে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মগুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জীবন-ঘনিষ্ঠ উপাদান নিয়ে সাহিত্য রচনাকে তিনি বেশি পছন্দ করতেন। এ কারণে মৃত্তিকালগ্ন সংস্কৃতির প্রতিফলন আমরা রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্মে লক্ষ করি। তিনি ‘ভাঙা গান’-এর ধারাকেও আত্মস্থ করেছেন এবং বাংলা গানের লোকজ ধারাটাকেও ব্যবহার করেছেন। বঙ্গভঙ্গকালে মানুষকে অনুপ্রাণিত, একত্রিত ও দেশাত্মবোধে জাগ্রত করার প্রয়োজনে তিনি এগুলো করেছেন। প্রয়োজনানুযায়ী তিনি গানের কথা, জীবনঘনিষ্ঠ সুর এবং ছন্দ ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন এবং সাফল্যও লাভ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ গানের সাথে পরিবেশকে ব্যবহার ও উপস্থাপনেও সচেষ্ট ছিলেন। তিনি বাংলা গানে অন্যভাষার সুরের প্রয়োগেও নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তিনি কর্ণাটক থেকে সংগ্রহ করেন তাদের সুর, মহীশূর থেকে আনলেন ভজনের রীতি। রবীন্দ্র সংগীতে যে মঙ্গলালোকের কথা বিধৃত সেটিও মহীশূরের ভজন থেকে সংগ্রহ করা। তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও আত্মোপলব্ধি দিয়ে স্বীয় দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করেছেন। তার প্রেমের গানে দুই ধরনের প্রেম আছে। একটি ঈশ্বরপ্রেম এবং অন্যটি মানবপ্রেম। কলকাতার ইট-পাথরের আধুনিক নাগরিক সমাজ থেকে পূর্ববঙ্গের স্নিগ্ধ-কোমল প্রাকৃতিক পরিবেশে তার প্রতিভা নূতন দীপ্তিতে ভাস্বর হয়ে ওঠে। তিনি নতুন করে আবির্ভূত হন। তার প্রেমের গানে বাউল গানের ছোঁয়া লাগে। এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রবির ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদ, কোলকাতার বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও গবেষক কৌশিক মজুমদার। এরপর গৌতম কুমার রায় রচিত পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক চতুর্থ প্রকাশনা ‘প্রাণ-প্রকৃতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।