নেত্রকোণায় কুমড়া বিক্রি করে ২৬ কোটি টাকা মুনাফার আশা

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নেত্রকোণা প্রতিনিধি

নেত্রকোণায় চলতি বছর ২৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এই জমি বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি ছিল। সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এই পরিমাণ চাল কুমড়া বিক্রি করে সাড়ে ২৬ কোটি টাকার বেশী মুনাফা হতে পারে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, জেলার কলমাকান্দা উপজেলার হিরাকান্দা, হাতিমঞ্জি, রহিমপুর, চান্দুয়াইল, দুর্গাপুর উপজেলার হাতিমঞ্জি, বাদামতৈল, পালপাড়া, ধোপাপাড়া, চন্ডিগড়, বেলতলি কোণাপাড়া, বারহাট্ট উপজেলার ধলপুর, সিংধাসহ জেলার ৩০টি গ্রাম এলাকায় চালকুমড়া, টমেটো ফুলকফি ও ডাটাসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজির চাষ হয়েছে। ব্যবহার করা হয়নি কীটনাশক। অধীক জমিতে হয়েছে চাল-কুমড়ার চাষ। ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টরে ২৫ থেকে ২৬ মেট্রিক টন চালকুমড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। এতে একরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা। জেলার ভারতীয় সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দার নরুল্লাপাড়া গ্রামের বৃহৎ কৃষক শফিকুল আলম জুঁই। তিনি ১০ একর জমিতে চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ফুল কপি প্রভৃতির আবাদ করেছেন। এই জমি পতিত ছিল শত বছর। গতবার দেড় একর জমিতে উৎপাদন ব্যয় বাদে আয় হয়েছিল সাড়ে ৯ লাখ টাকা। এবার দেড় একরে চালকুমড়া, দেড় একর জমিতে টমেটো, বেগুন, বাদাম ও অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, ফলন আসতে শুরু হয়েছে। ক্ষেতে রেখেই এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কুমড়াসহ শাকসবজি বিক্রি করেছি। আশা করি মৌসুম শেষে খরচ বাদে ২০ লাখ টাকা মুনাফা হবে। কৃষক শফিকুল আলম জুঁই আরো বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিতে একসময় জনবসতি কম ছিল। প্রায় গ্রামেই শত শত একর জমি ছিল পরা-পতিত। মানুষের জীবন-জীবিকা ছিল খুবই কঠিন। অভাব ছিল প্রতিটি পরিবারে। হতদরিদ্র মানুষেরা নিজ এলাকা ছেড়ে কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ-কাম করে কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করত। আবার কাজ না পেয়ে অনেকেই সীমান্তে চোরাকারবারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ত। একপর্যায়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় পতিত শত শত হেক্টর জমি চাষাবদের আওতায় আসে। বর্তমানে এলাকার অনেক কৃষক বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে আগে পতিত থাকা একরের পর একর জমিতে লাউ, শসা, বেগুন, জিঙ্গে, কফি, টমেটো, চালকুমড়াসহ ইত্যাদির চাষ করছেন। এতে বেকারত্ব লাঘবসহ অনেকেই হয়ে উঠেছেন সচ্ছল-স্বাবলম্বী। বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর গ্রমের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ক্ষেতটা বহুত বছর দরে (ধরে) পরা আছিন, গরু গাস (ঘাস) খাইত, অহন কলের লাংগল দিয়া আল বাইয়া ৩০ কাঠা ক্ষেতে কুমড়া লাগাইছি। ফলন বালা অইছে। পাইকাররা ক্ষেতে গারি লইয়া আইয়া ৪০-৫০ হাজার (হাজার) টেহা মন দরে কিন্যা নিতাছে। বছর শেষ ওইলে কাঠায় না অইলেও সাইট (ষাট) মন কুমড়া অইবো। ৩০ কাঠা ক্ষেতে ২০ লাখ তাইক্যা (থেকে) ২৪ লাখ টেহা (টাকা) আই (আয়) অইবো আশা করতাছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোণার পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বসতবাড়ির আশপাশসহ পতিত জমি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী স্থাপনসহ পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এবার জেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে কুমড়ার আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত কুমড়া বিক্রি থেকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।