স্ট্রবেরি এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক চাষ হচ্ছে। ফলটির চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের স্ট্রবেরি চাষ এলাকায় সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও তা যাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়। উপজেলার বরমা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়। পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি চাষে মাটি ঝরঝরে করতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। বিঘাপ্রতি স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর উপজেলার শ্রীপুর পৌরসভা, বরমী, গাজীপুর, গোসিংগা ও তেলিহাটি ইউনিয়নে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। ওই পৌরসভা ও ইউনিয়নের কেওয়া, বরমা, গাড়ারন, মাওনা, পেলাইদ গোদারচালা এলাকায় চাষ একটু বেশি হচ্ছে। এতে অল্প পুঁজি, অল্প শ্রমে লাভ অনেক বেশি। অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। কৃষক আশরাফুল জানান, মৌসুমের শুরুতে স্ট্রবেরির সাদা ফুল ফোটে। পরে হলুদ রঙের ফল ধরে। সবশেষে পাকা লাল টুকটুকে রং ধারণ করে। উইন্টারডন জাতের একটি চারা গাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ২ কেজি ফল পাওয়া যায়। কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সাইফুল ভাইয়ের বাগান দেখ আমিও স্ট্রবেরি বাগান করবো বলে ভাবছি। স্ট্রবেরি চাষে বেশি খরচ হয় সেচে। এ পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ বার সেচ দিয়েছি। স্ট্রবেরির বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা গাছ থেকে স্ট্রবেরি ছিড়ে খাচ্ছেন। অনেকেই এখন স্ট্রবেরি চাষের কথা ভাবছেন।’ স্ট্রবেরি চাষ করে সফল হওয়া গোদারচালা গ্রামের তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্ট্রবেরি চাষ করে স্বপ্নপূরণ করেছি। এটি বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ফল। দেখতে কিছুটা লিচুর মতো। অনেক কৃষক বাড়ির ছাদে স্ট্রবেরি চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘টিস্যু কালচার ল্যাব থেকে মাদার গাছ কিনে চারা তৈরি করি। জমিতেও রোপণ করি এবং অন্যদের কাছে চারা বিক্রি করি। মাদার গাছ ৪০ টাকা করে কিনি। যে চারা উৎপাদন হয়, নিজের চাহিদা মিটিয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করি। দেড় বিঘা জমিতে ৪৫০টি স্ট্রবেরি গাছ লাগিয়েছি। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি স্ট্রবেরি তুলি। প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি করি। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেছি।’ শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘স্ট্রবেরি উচ্চমূল্য এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এটি রসালো ও পুষ্টিকর। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।’