ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাবিতে ফিরোজ অধ্যায়ের সমাপ্তি

সাময়িক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর
জাবিতে ফিরোজ অধ্যায়ের সমাপ্তি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত বুধবার (১৩ মার্চ) প্রক্টর পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর পদত্যাগপত্র প্রদান করেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান। তার আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। অফিস আদেশে জানানো হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের পদত্যাগপত্র প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে ১৮ মার্চ তারিখ বিকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বে অবহেলা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট সাব্বির আলমের পদত্যাগসহ পাঁচদফা দাবিতে প্রায় একমাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম’ নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’। আনদোলনের ধারাবাহিকতায় অনির্দিষ্টকালের প্রশাসনিক ভবন অবরোধের তৃতীয় দিন (১৩ মার্চ) উপচার্যের আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করেন তারা। সেদিন উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সাথে আলাপকালে আশ্বাস প্রদান করে বলেছিলেন, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ও প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. সাব্বির আলম স্বেচ্ছায় ১৭ মার্চের মধ্যে পদত্যাগ করবেন। যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে ১৮ মার্চের মধ্যে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

সদ্য সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রক্টর আলমগীর কবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তৎকালীন পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন উক্ত বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বিভাগের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি শিক্ষক- শিক্ষার্থী সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তোরণে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই আমি সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্রুততম তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবো।’

সাবেক প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি, এর আগেও আমি দুইবার উপাচার্য বরাবর অব্যাহতি চাইলেও আস্থাবান হওয়ায় তার অনুরোধে আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। আমার এই অব্যাহতিকে আমি ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছি। সময়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। দীর্ঘদিন এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্টেকহোল্ডারের দায়িত্বেই পরিবর্তন হওয়া উচিত। কারণ, সময়ের পরিক্রমায় অভিনব প্রয়োজন সমস্যা যুক্ত হচ্ছে। তাই চ্যালেঞ্জের কথা বিবেচনা করে দায়িত্বেও পরিবর্তন হওয়া উচিত। দীর্ঘদিন প্রক্টরের দায়িত্বে থাকায় আমি আমার উচ্চতর গবেষণায় সময় দিতে পারিনি, এখন আমি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হতে চাই, উচ্চতর গবেষণায় নিজেকে মগ্ন করতে চাই। আ স ম ফিরোজ উল হাসান ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সময় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর ও ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পান আ স ম ফিরোজ। এরপর ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্থায়ী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত নানা ইস্যুতে অভিযুক্ত হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া, দোষীদের বাঁচাতে লেজুড়বৃত্তি, নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক সিন্ডিকেটে সহায়তা, ছাত্র-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে অবহেলা, ধর্ষকদের পালাতে সহযোগিতা করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করার বিষয়ে কার্যকরি ভূমিকা পালন না করাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত