ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বরগুনায় ‘কান্দি’ পদ্ধতিতে লোনা জমি আবাদ

বরগুনায় ‘কান্দি’ পদ্ধতিতে লোনা জমি আবাদ

বরগুনা উপকূলের বিস্তীর্ণ লোনা জমিকে উর্বর করে সবজি চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, শেষ দুই মৌসুমে (এক বছরে) একটি গ্রামে প্রায় ৯০ হাজার মণ সবজির উৎপাদন হয়েছে, বিক্রি হয়েছে কয়েক কোটি টাকায়। কৃষকদের এ উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়েছে পাশের জেলাতেও।

বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগরপাড়া ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের যে জমিতে লবণাক্ততার কারণে এক যুগ আগেও ধানের চাষও করা যেত না, সেখানেই এখন বছরজুড়ে রকমারি ফসল ফলাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার চাষিরা বিশেষ এক চাষপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, স্থানীয়ভাবে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কান্দি’। কৃষিবিদরা বলছেন, এ চাষপদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে রেইজড বেড (জমি উঁচু করার) পদ্ধতি বলা হয়। তালতলী উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দুই দিকে নদী, এক দিকে সাগরবেষ্টিত সওদাগরপাড়া গ্রামের খালগুলোয় লবণাক্ত পানির প্রবাহ থাকে। নদী থেকে গ্রামে ঢোকা সেই পানি মাটিতে মিশে লবণাক্ততার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় ৪ হাজার ৯৪০ একর জমি অনাবাদি থাকত। বছরে শুধু আমন ধান ফলাতেন কৃষকরা। সওদাগরপাড়া আদর্শ কৃষি সমিতির হিসাবে, ‘কান্দি’ পদ্ধতি অবলম্বন করে শেষ দুই মৌসুমে (এক বছরে) গ্রামে প্রায় ৯০ হাজার মণ সবজির উৎপাদন হয়েছে, বিক্রি হয়েছে কয়েক কোটি টাকায়।

গ্রামে ‘কান্দি’ পদ্ধতির সূচনাকারী কৃষক শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি সওদাগর পাড়ার পতিত লোনা জমিতে ফসল চাষের উপায় খুঁজতে থাকেন। ২০১২ সালে প্রথম তিনি নিচু জমির চারপাশের মাটি কেটে মাঝখানে উঁচু করে সবজির আবাদ করলেন। ক্ষেতের পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় প্রায় ছয় ফুট গভীর গর্ত হয়। এতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়। এ পানি শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেওয়া যায়। মাঘের শেষ সময়ে খেতের পাশের কুয়ায় জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি দিয়ে বোরো আবাদও হচ্ছে। আগে গ্রামে বোরো আবাদ হতো না। সেচের জন্য মিঠাপানির অভাব পূরণ করলেন এভাবেই। শাহাদাত হোসেন জানান, সবজি চাষের জন্য জমি তৈরির সময় উপরের অংশের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে চলে আসে। এতেই লবণাক্ততার প্রভাব কমানো সম্ভব হয়েছে। তারা যে বেড তৈরি করছেন, তা সমতল থেকে সাড়ে তিন ফুট উঁচু। ফলে সেখানে লবণাক্ততা ছড়াতে পারে না।

শাহাদাতের পদ্ধতি অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছেন গ্রামের অন্যান্য কৃষকরা। গ্রামের ২৪০ জন কৃষক ৪৯৪ একর জমিতে সবজি আবাদ করছেন। গঠন করেছেন সওদাগরপাড়া আদর্শ কৃষি সমিতি। মূলত শীত মৌসুমে শিম, মরিচ, বেগুন আর বর্ষা মৌসুমে মরিচ, শসা, মিষ্টিকুমড়া, তরমুজ চিচিঙ্গা, ঝিঙে, বরবটি ও লাউ বেশি আবাদ হয়। তারা জানান, শীতের শেষ দিকে বৃষ্টির জমানো পানি বোরো আবাদের জন্য সেচ দেওয়ার পর শেষ হয়। এরপর পায়রা নদীর শাখা তালতলী খাল থেকে পাইপের সাহায্যে পানি এনে সেচ দিতে হয়। এ জন্য বিএডিসি তাদের দুটি পাম্প মেশিন ও পাইপ দিয়েছে।

তালতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, বছরব্যাপী সবজির আবাদের সূত্র ধরেই গত দুই বছর গ্রামের ৪০০ হেক্টরে জমিতে বোরো আবাদও হচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ২০ শিক্ষার্থীও সবজির আবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

সওদাগরপাড়ার দেখাদেখি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষকরাও ‘কান্দি’ পদ্ধতিতে ফসল আবাদ শুরু করেন। ২০১৮ সালে তারা নীলগঞ্জ আদর্শ কৃষক সমিতি গঠন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত