সবুজ গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন মালবেরি ফল। সবুজ, লাল ও কালো রং হওয়ায় ফলটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। একসময় পঞ্চগড়ের পথেঘাটে এ ফলের দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে গাছের সংখ্যা। অনেকে এ ফলটিকে তুঁত ফল হিসেবেই চিনে। এবার ফলটি বাগানে চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদায়। মালবেরি নামটি পরিচিত না থাকলেও গ্রামগঞ্জে ফলটিকে তুঁত ফল হিসেবে চিনে সবাই। তুঁত গাছের পাতা রেশম উৎপাদনের গুটি পোকার প্রিয় খাদ্য। সে হিসেবে তুঁত ফল হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে তুঁতের আবাদ কমে যাওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই ফলটি চেনেন না। উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণসম্পন্ন মালবেরির বাগান করছেন জেলার বোদা উপজেলার মাসুদ রানা। তিনি শ্যামাগাঁও গ্রামের স্কুলশিক্ষক মজিবর রহমানের ছেলে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ফলের বাগান করছেন। শুরুতে আম ও কমলার বাগান গড়ে তুললেও পরে এর সঙ্গে যোগ করেন মালবেরি। পরীক্ষামূলকভাবে লাগান ১৫টি চারা। সেসব চারা বড় হয়ে এখন ফল ধরেছে। গাছে পাতার চেয়ে ফলই বেশি। গাছের পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুচালো। ফলটি আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে। মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকতে শুরু করে। তবে সারা বছরই মিলে এ ফল। মালবেরি চাষি মাসুদ রানা বলেন, আমি ৫ একর জমিতে আম ও মাল্টা আবাদ করে সফল হয়েছি। এ জমিতেই পনেরটি মালবেরি গাছ রোপণ করেছিলাম দুই বছর আগে। এটা ছিল পরীক্ষামূলক। বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নতুন এই ফলটি আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আটটি জাতের ১০টি গাছ সংগ্রহ করে এই মালবেরি চাষ করেছি এবং পরীক্ষামূলকভাবে চাষে প্রতিটা গাছে ফল এসেছে। মাসুদ রানা বলেন, এটি আবাদ করতে তেমন খরচ নেই। রোগবালাইও খুব কম। তেমন কীটনাশক লাগে না। কলম চারা লাগালে দুই থেকে চার মাসের মধ্যেই গাছে ফল ধরে। জৈব সার ব্যবহার করলে সারা বছরই ফল পাওয়া যায়। মালবেরি আমদানিনির্ভর ফল। এই ফল ঢাকা শহরে সুপার শপগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ মো. নইমুল হুদা সরকার বলেন, পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে এখন তুঁত তথা মালবেরি ফলের চাষ শুরু হয়নি। তবে আমরা কয়েকজন চাষিকে তুঁত আবাদের জন্য চারা দিয়েছিলাম। আমাদের এ অঞ্চলে মাটি মালবেরি চাষের উপযোগী। মালবেরির বোটানিক্যাল নাম মরাস অ্যালবা। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গড় উচ্চতা হয়ে থাকে ৪০-৬০ ফুট। গাছের ফুলগুলো নিখুঁতভাবে সাজানো। প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রং ধারণ করে। দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি স্বাদের। ফ্যাটবিহীন সুমিষ্ট স্বাদযুক্ত এই ফলটি খুবই পুষ্টিকর। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছের চারাও তৈরি করা যায় খুব সহজে। বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদেও চাষ করা যায়। প্রাচীনকালে তুঁত গাছের বাকল দিয়ে কাগজ তৈরি হতো বলে জানা যায়।