চাকরি না পেয়ে স্ট্রবেরি চাষ
ভাগ্যবদলের স্বপ্ন জাহিদের
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুর রশীদ, লালমনিরহাট
লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরির জন্য ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে। সেই চাকরির বাজার মন্দা হওয়ায় নিজেই উদ্যোগী হয়ে স্ট্রবেরি চাষে মনোযোগী হন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মনোরম গ্রামের জাহিদ হাসান বসুনিয়া। ভাগ্যের মোড় ঘোরাতে তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছেন তিনি। প্রথমবার হলেও দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণ এই উদ্যোক্তা। এতে জীবনের ভাগ্যবদলানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
জাহিদ জানান, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করে সরকারি চাকরির জন্য ৩ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর নিজেই কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১ একর জমিতে প্রথম আলুর আবাদ শুরু করেন। লাভ হওয়ায় পরের চার মৌসুমে আলুর আবাদ চালিয়ে যান। কিন্তু সবসময় ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল জাহিদের। সেই ইচ্ছে থেকে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হন। ইউটিউব, গোগলে খুঁজতে থাকেন চাষের পদ্ধতি। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়ার স্ট্রবেরি চাষি হাসানের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জমি প্রস্তুত করেন তিনি। কিন্তু উচ্চ মূল্যের ফল হওয়ায় পুঁজির অভাবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে বিপাকে পড়তে হয় তাকে। বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করেন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সবাই ঝুঁকিপূর্ণ আবাদ হওয়ায় উপযুক্ত জামানত থাকাতেও ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনটি আলাদা এনজিওর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সেই সাথে নিজের জমানো ২ লাখ টাকা দিয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ প্রথমবারের মত সেই আলুর জমিতে রোপণ করেন ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা। তবে অভিজ্ঞতা না থাকায় অর্ধেকেরও বেশি চারা তার মরে যায়। হতাশ না হয়ে অবশিষ্ট প্রায় আট হাজার চারাগাছের যত্ন করতে শুরু করেন। তার এ কাজে সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ করেন চারজন অভিজ্ঞ শ্রমিক। শ্রমিকদের পরিচর্যা আর নিজের প্রচেষ্টায় অবশেষে আড়াই মাসেই ফসল তোলা শুরু করেন ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি তোলা। ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখে প্রথম ফল তোলেন জাহিদ এবং এই অল্প কয়েক দিনে ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। আশা করছেন আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন তুলতে পারবেন। তাতে অন্তত খরচ বাদে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। জাহিদ হাসানের স্ট্রবেরি বাগানের কৃষি শ্রমিক সন্তোষ রায় বলেন, শুরু থেকে আমরা তিনজন কাজ করছি। প্রথম দিকে কঠিন মনে হলেও এখন স্ট্রবেরি চাষের নিয়মকানুন বুঝে গেছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগাছা নিড়ানো, গাছ, পাতা, ফুল, ফলকে নজরে রাখা, কীটনাশক স্প্রে করা, পাকা স্ট্রবেরি তোলা এসব কাজ করি। জেলা শহরের থানাপাড়া থেকে দেখতে আসা তরুণ রাজু বলেন, জাহিদ ভাইয়ের চাষের কথা শুনে তাজা স্ট্রবেরি কিনতে এসেছি। এ অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয় না। গাছ থেকে টাটকা স্ট্রবেরি পাওয়া আসলে অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। জাহিদ হাসান বলেন, যারা শিক্ষিত বেকার যুবক আছে, তাঁরা শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে যদি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কিছু করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। আধুনিক কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া এখন সহজ। একসময় চাকুরির জন্য অনেক ঘুরেছি, সৃষ্টিকর্তা হয়তো ভাগ্যে সেটা রাখেনি। কিন্তু আমি নিজেই নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি স্ট্রবেরির মতো দামি ফল বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করে। আমার প্রত্যাশা স্ট্রবেরি চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম হব। এতে স্থানীয় পুষ্টির চাহিদা যেমন মিটবে পাশাপাশি আমার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শিফাত জাহান বলেন, এ অঞ্চলে স্ট্রবেরি চাষ সাধারণত স্বল্প পরিসরে নিজের চাহিদা পূরণে কিংবা সখের বশে করেন কেউ কেউ। তবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে হলে প্রথমে বাজারজাতকরণের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেন না, স্ট্রবেরি সংবেদনশীল ফল, অল্প সময়ের জন্য তাজা থাকে। কিন্তু জাহিদের মতো তরুণ উদ্যোক্তা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারছেন এটা বড় ব্যাপার। প্রযুক্তিগত কিংবা অন্য কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে কৃষি বিভাগ তাকে অবশ্যই সেটা করবে বলে তিনি জানান।