জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

চার মাসে ৩ সিন্ডিকেট সভা জট নিরসনে ফিরেছে গতি

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাজেদুর রহমান, জবি

বিশ্ববিদ্যালয় আইনে দুই মাসে অন্তত একবার সিন্ডিকেট সভা করার বিধান রয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক গুরুতর অসুস্থ ও মৃত্যুবরণ করায় ১০ মাস ছিল সিন্ডিকেট বিহীন। এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পদোন্নতি, শিক্ষাছুটি, পিএইচডি, নিয়োগসহ নানা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁলে থাকায় তৈরি হয় জট। ড. সাদেকা হালিম উপাচার্য হিসেবে যোগদানের ৪ মাসে পরপর তিনটি সিন্ডিকেট সভা করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পদোন্নতি, নিয়োগ, শিক্ষাছুটিসহ নানা বিষয়ে জট নিরসনে ফিরেছে গতি। এছাড়া অবন্তিকার আত্মহত্যার পর যৌন নিপিড়নে দুই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় সিন্ডিকেটের প্রতি নজর ছিল গোটা দেশের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমি যোগদানের পরেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। সাবেক প্রয়াত উপাচার্য অসুস্থ ও মৃত্যুবরণ করায় দীর্ঘদিন সিন্ডিকেট না হওয়ায় ১ বছর শিক্ষকদের পদন্নোতি ঝুঁলে ছিল। এই জট নিরসনে আমি একদিনে তিন থেকে চারটি করে বোর্ড করেছি। শুক্রবার-শনিবার অফিসসহ প্রতিদিন রাত ৯-১০টা পর্যন্ত অফিস করেছি। শিক্ষকদের শিক্ষাছুটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি না হলে বিদেশে উচ্চ ডিগ্রি নিতে যাওয়া শিক্ষকরা না ঝামেলায় পড়েন। দীর্ঘদিন সিন্ডিকেট না হওয়ায় তারা ঝামেলায় ছিলেন। ১০৫ জনের শিক্ষা ছুটির ঝামেলা নিরসন করেছি। তাদের বেতন ভাতাদির সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।

উপাচার্য বলেন, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোর্ড করতে হয়েছে। প্রয়াত উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক স্যারের সময় ১৫ জন রেগুলার কর্মচারী, তিনজনকে অতিরিক্ত নেয়া ও ছয়জন কর্মচারীকে বিজ্ঞপ্তি বাদে নিয়োগসহ অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়ার নানা তদন্তাধিন বিষয় ছিল। ওগুলোতে সমস্যা থাকায় তিনি সাক্ষর করে যাননি। সেগুলো সিন্ডিকেটে আলোচনাসহ নতুন করে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ জটিল বিষয়টি সমাধান করা হচ্ছে।

সাদেকা হালিম বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিপীড়নের মতো তদন্তাধীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চলমান তদন্তের ওপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেটে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম দীর্ঘদিন পর বিচার পেয়েছে। আর গণিত বিভাগের শিক্ষক মানিক মুন্সীর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য সিন্ডিকেট সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অবন্তিকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার ঘটনাটি তদন্তাধিন। অনেক টেকনিক্যাল ইস্যু রয়েছে সেটার তথ্য প্রয়োজন বলে কমিটি জানিয়েছে। যেমন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, অনেক স্টেকহোল্ডারের বক্তব্য নেয়া। এটি একটি জটিল ও সেনসিটিভ বিষয়। আমি যোগদান করার পর সকল যৌন নিপিড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে একশন নিয়েছি। যৌন নিপিড়নের ঘটনা প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় নয়। সকল ডীন, একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট মেম্বারসহ সবাইকে নিয়ে একটি টিমওয়ার্ক হিসেবে আমরা কাজ করছি। এছাড়া নতুন ক্যাম্পাসের প্রতি আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। প্রকৌশল ভবনের কাজ এগিয়ে চলছে। ভূমি উন্নয়নে মাটি ভরাটের টেন্ডার দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১২ একরের জমি আমরা বুঝে নিচ্ছি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের নানা বিষয় পেন্ডিং ছিল। কম সময়ে পরপর সিন্ডিকেট হওয়ায় বহু পদন্নোতি-শিক্ষাছুটি হয়েছে। বহু বোর্ড হয়েছে। জট কমে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। বর্তমান উপাচার্য একজন একাডেমিক ব্যক্তি। তাকে সহযোগিতা করলে বিশ্ববিদ্যালয় আগাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের (মনির) বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি চ্যালেঞ্ছিং জায়গা। অল্প সময়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন ভিসি। দ্রুত সময়ে কয়েকটি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনেক জটিল বিষয় সমাধান করেছেন তিনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুশি। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ বাতিল করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।