ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমড়ো বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারীরা

কুমড়ো বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারীরা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙা গ্রামের নারীদের বছরে ৫ মাস কুমড়োবড়ি তৈরি করে সংসার চলে। বছরের এই ৫ মাস বেশির ভাগ পরিবারগুলোর আয়ের একমাত্র উৎস এই কুমড়োর বড়ি বিক্রি। কুমড়োবড়ি তৈরি করে এই গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তরকারির স্বাদকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে কুমড়ো বড়ি অতুলনীয়। কলাই ডাল পাটায় বেটে তাতে চাল কুমড়ো মিশিয়ে তৈরি হয় এই বড়ি। প্রতি বছরই কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত গ্রামটিতে ধুম পড়ে যায় বড়ি তৈরির। কিন্তু বর্তমানে ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এর বিক্রয় মূল্য না বাড়লে বড়ি উৎপাদন করা দুরুহ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা। জানা গেছে, বাজার থেকে ডাল কিনে সেই ডাল রাতে ভিজিয়ে রাখা হয়। কাক ডাকা ভোরে সেই ডাল মেশিনে ভেঙে অথবা শিল পাটায় বেটে উজ্জল রোদে ডাল ও চাল কুমড়ার মিশ্রণ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়োর বড়ি। নরম অবস্থায় এগুলো পাতলা কাপড়ে ও মাচায় সারি সারি করে রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। ভাল করে শুকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। রুপগঞ্জ বাজারে শুকনো কুমড়োর বড়ি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের অনেক নারী এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অনেকে ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। ওই গ্রামের কুমড়োর বড়ির কারিগর মিনতি কুন্ডু বলেন, ছোট বেলায় মা মাসিদের কাছ থেকে কুমড়োর বড়ি তৈরির কাজ শিখেছি। ১০-১২ বছর ধরে কুমড়োর বড়ি তৈরির কাজ করছি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। এই কাজে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা সাহায্য করে থাকে। আমরা চেষ্টা করছি দেশের সর্বত্র জনপ্রিয় এই খাবার ছড়িয়ে দিতে। নারী উদ্যোক্তা ইসমত আরা বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কুমড়োর বড়ি বাজারের অন্য পণ্যের তুলনায় দামের দিক থেকে অনেক কম। ভালো বাজার পেলে সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয় এই খাবার বিক্রি করে গ্রামের এই নারীরাও স্বাবলম্বী হতে পারবে। এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার বলেন, বাংলার ঐতিহ্য কুমড়ার বড়ি সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। এর মূল উপকরণ চাল কুমড়া ও মাসকলাই যা নড়াইলে ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এ ক্ষেত্রে গ্রামের নারীরা এই কাজে আত্মনিয়োগ করে। তারা যে কুমড়ার বড়ি তৈরি করছেন, এতে তাদের যেমন কার্মসংস্থান হচ্ছে, সেই সঙ্গে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, উন্নতবাজার ব্যবস্থা ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে গ্রামের নারীরা আরো উৎসাহী হয়ে এই কাজে আত্মনিয়োগ করবে। এই কার্যক্রম যদি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং বাজারব্যবস্থা উন্নত করতে পারি, তাহলে অনেকেই এই কাজে এগিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত