ঈদে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার পর্ব শেষ হয়ে আসছে। তবে ঈদ এবং ঈদের ছুটির দিনে কি রান্না হবে তা নিয়েই চলছে, এখন নানা হিসাব-নিকাশ। পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার পর মানুষ এখন মুদি পণ্যের দোকানমুখী হচ্ছে। তবে সীমিত আয়ের মানুষ দামের সঙ্গে হিসাব মেলাতে পারছে না। ঈদে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটা শেষের পথে। তবে অনেকে ঈদের চাঁদ দেখার দেয়ার পর রাতে বের হন কেনাকাটা করতে। ঈদের ছুটিতে কোনো পরিবারে কি রান্না হবে, তা নিয়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। ঈদের আগে পরে অনেকের বাসা-বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন যাতায়াত করেন। তাদের আপ্যায়নের খাবার প্রস্তুতের উপকরণ সংগ্রহ করার জন্য মানুষ এখন কাঁচা বাজারমুখী হচ্ছে। তবে দামের সঙ্গে হিসাব মেলাতে পারছে না সীমিত আয়ের মানুষ। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিটি ঘরে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। যারা ঈদে রাজধানীতে থাকবেন তারা নতুন কাপড়চোপড় কেনার পর্ব শেষ করে এখন মুদি পণ্য কেনার কাজে ব্যস্ত। তবে এসব পণ্যের দাম হাতের নাগালের বাইরে। রমজানের দুই সপ্তাহ পার হতে না হতেই বাড়তে শুরু করে ঈদের প্রধান খাদ্য উপকরণ মাংসের দাম। ঈদের আগে আগে মাংসের বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী। মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার কোনোটারই কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। রোজা শুরুর আগেও যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ২১৫ টাকা বা তার আশপাশে, তা আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে যে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন ৭৮০ টাকা। দাম বাড়লেও ঈদের জন্য এখনই মাংস কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের শঙ্কা, ঈদের আগে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। বিক্রেতারাও বলছেন, চাহিদার ওপর মাংসের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করছে। মাংসের দাম বেড়েছে আলু, আদা, রসুন, এলাচ, কাজুবাদাম, জয়ত্রীর মতো পণ্যের দামও। সরকার গরুর মাংসের কেজি ৬৬৪ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা না করেই বাজারে নিয়মিতই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাংস। দেশি মুরগি, কক ও লেয়ার মুরগির মাংসও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরো বেড়েছে। তবু চাপ উপেক্ষা করেই আসন্ন ঈদের কেনাকাটা করছেন তারা। রমজানের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা কেজিতে, কক মুরগি ৩১৫-৩২৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৬৮০ টাকায়। অথচ ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২৩৫ থেকে ২৫০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩৫ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৬০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন শুধু ঈদ দেখেই এত দাম দিয়ে মাংস কেনা হচ্ছে। আর দেশি মুরগির মাংসের দাম গরুর মাংসের দামের কাছেই চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, দাম কেন বাড়ছে জানি না। তবে আরো বাড়বে। ঈদের জন্য সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। ঈদের আগে দাম কিছুটা বেশিই থাকে। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, মিয়ানমারের আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের দেশি রসুনের দাম আবার বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম ৫ টাকা ও মিয়ানমারের আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। আলু পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসায় দাম কমে গেছে। তবে আলু, রসুনের দাম আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের মসলার বাজার। বাজারে এলাচ ৩২৫০ টাকা, দারুচিনি ৫৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, জিরা ৭০০ টাকা, জয়ফল ১২৫০ টাকা, জয়ত্রী ৩৬০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৮০ টাকা, কিশমিশ ৫৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৯৫০ টাকা, কাজুবাদাম ১২৫০ টাকা, কাঠবাদাম ১০৮০ টাকা, চিনা বাদাম ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে এলাচ গত সপ্তাহে ২৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। এছাড়া জয়ত্রী বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকা ও কাজু বাদাম বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়। এক সপ্তাহে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০০ ও ৫০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত ও রেডিমিক্স মসলাও রয়েছে বাজারে। এগুলোর মধ্যে মাংসের মসলা ৯০ টাকা, মুরগির মাংসের মসলা ৯০ টাকা, কালা ভুনার মসলা ৮০ টাকা, বিরিয়ানির মসলা ৫৫ টাকা, মেজবানির মাংস মসলা ৮০ টাকা, রোস্টের মসলা ৬০ টাকা, কাবাব মসলা ১০০ টাকা, চটপটির মসলা ৫০ টাকা, জর্দা মিক্স ১৫০ টাকা, ফালুদা মিক্স ১০০ টাকা, ফিরনি মিক্স ৬০ টাকা, হালিম মিক্স ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি প্যাকেট। তবে মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রায় সব মুদি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্যাকেটজাত ও খোলা সেমাই, নুডুলস, ম্যাকারনি। মানভেদে ৫০০ গ্রামের প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই ১৫০-৬০০ টাকা, খোলা সাদা লাচ্ছা সেমাই ১৫০ টাকা, খোলা ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা, খোলা রঙিন লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেটজাত বার্মি চিলি সেমাই (লম্বা সেমাই) ৪৫ টাকা, খোলা বার্মি চিলি সেমাই ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে বিভিন্ন নুডলস ৫০-১৫০ টাকা, ম্যাকারনি ৮০-৩০০ টাকা প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এখনও হাতে সময় আছে বলে মানুষ সেমাই বা মসলা জাতীয় জিনিস কিনছে না। কয়েক দিন পরেই এসব পণ্য কিনবে। এখন পর্যন্ত মানুষ মাছ, মাংস বা দুধ এ ধরনের পণ্যই বেশি কিনছে। তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে বাজারে প্রায় সব সবজির দামই রয়েছে নিম্নমুখী। বাজারে শিম ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৬০ টাকা, চেরি টমেটো ২০০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৪০-৯০ টাকা, ক্ষিরাই ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে। ঝড়-বৃষ্টি না হলে সবজির দাম আরও কমে যাবে। তবে বৃষ্টি হলেই বাড়বে সবজির দাম। বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৩০০-১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪৫০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।