পুঠিয়ার বানেশ্বর মহাসড়কে যানজট

সপ্তাহে বাড়াল দুই দিন হাট

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই পহেলা বৈশাখে নতুন ইজারাদার হাট হাতে পেয়েই যানজট কমানোর জন্য দুই দিন বাড়িয়ে সপ্তাহে চার দিন হাট বসানোর জন্য ঘোষণা দিয়েছেন। আগে থেকেই কলা হাট সপ্তাহে চার দিন থাকায় পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা সবজির হাটও দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইজারাদাররা। বিশেষ করে পুঠিয়ার বানেশ্বরে সপ্তাহে দুই দিন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী এবং যাত্রী সাধারণকে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল অন্তত ১১টা পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট। এখানেও ভোগান্তির পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। হাট ইজারার নামে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে যেমন কোটি কোটি টাকা জমা হয়, তেমনি প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও ঢুকে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সরোজমিন রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কটি এমনিতেই অনেকটা ব্যস্ততম। নাটোর পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় এই রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কৃষি ফসল কেনাবেচার জন্য উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ হাটের মধ্যে একটি হলো বানেশ্বর। এই বাজারের একেবারে মাঝখান দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক। বাজার এলাকার কিছু অংশ ফোর লেন হলেও বাঁকি অন্তত ৯০ ভাগই দুই লেন মহাসড়ক। আবার এই বাজারের পাটসহ অধিকাংশ কৃষিপণ্য বিক্রি হয় রাস্তার দুই ধারে। ব্যবসায়ীরা জানান, মূল হাট সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখন শুনছি নতুন ইজারাদাররা সপ্তাহে চার দিন হাট বসাবে। শুক্র-শনি এবং সোমণ্ডমঙ্গলবার বসে কলার হাট। আর শনিবার ও মঙ্গলবার বসে মূল হাট। ফলে এই দুই দিন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের। হাটের কলেজ গেট থেকে একেবারে শিবপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকে সেই ভোর থেকে। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কারণ, এ হাটে ভোর বেলা থেকেই শুরু হয় কেনাবেচা। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসছে এই হাটটি।

এখন হাটে কৃষিপণ্য কেনাবেচার পরিমাণ বেড়েছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। আবার ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু হাটের বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে একেবারে মহাসড়কের ওপরই বসে অধিকাংশ দোকান-পাট এবং চলে কৃষি পণ্য কেনাবেচার কাজ। হাটের ভেতর দিয়ে দ্রুতগামী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন চালাতে হয় খুব ধীর গতিতে। তার পরও অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে যানবাহন আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। হাটের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে হাটের ১ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। কিন্তু জায়গার সংকট থাকার কারণে দুই হাটের দিন ভিড় লেগেই থাকছে রাস্তার ওপর। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা মহাসড়কে যানজট এড়াাতে সপ্তাহে দুই দিন হাট বাড়িয়েছি। আগে শনিবার ও মঙ্গলবার হাট ছিল এখন থেকে শুক্রবার ও সোমবার পেঁয়াজ, রসুন ও শাকসবজির হাট দেওয়া হয়েছে। যেমন আগে থেকেই কলা হাট ছিল সেই কারণে কিন্তু কলা হাটে যানজট হয় না। তাই আমরা মহাসড়কে যানজট এড়াতেই সপ্তাহে চার দিন হাট দিয়েছি। বানেশ্বর হাটের সাবেক ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, আমরা নতুন করে আবার পুনরায় হাট পেয়েছি। যানজটের কারণে যাতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। তাই আমরা বানেশ্বর মহাসড়কে যানজট এড়াতেই সপ্তাহে চার দিন হাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে করে শুক্রবার ও সোমবার যেমন কলা হাট বসে ঠিক সেই ভাবেই পেঁয়াজ, রসুন ও শাকসবজির হাট বসবে। প্রশাসন যেভাবে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে, সেভাবেই আমরা খাজনা (টোল) আদায় করব। হাটের উন্নয়ন করতে হলে সেটি প্রশাসন করবে।’

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, কে, এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর হাট বসার কথা না। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে হাট বসে আসছে সেহেতু সবাইকে নিয়ে বসে এটা নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে দেখছি কী করা যায়। আর আমরা ১ বছরের জন্য হাট লিজ দিয়েছি তারা সপ্তাহে ক’দিন হাট বসাবে, সেটি তাদের বিষয়।