ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জামগ্রামে বছরে সাড়ে ৩ কোটি টাকার প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি

জামগ্রামে বছরে সাড়ে ৩ কোটি টাকার প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত ফুল গ্রাম হিসেবে পরিচিত জামগ্রাম। এ গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার প্লাস্টিকের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে কৃত্রিম ফুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকার ফুল তৈরি হয় এ গ্রামে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তারা ফুল বিক্রি করেন। বৈশাখ মাসকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে ফুল তৈরি কারিগরদের। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জামগ্রাম। এ গ্রামে অধিকাংশ পরিবারই নিম্নবিত্ত। তাদের একমাত্র পেশা কৃষি হলেও বর্তমানে তারা প্লাস্টিকের ফুল তৈরি পেশার সাথে সম্পৃক্ত। গত প্রায় ৩০ বছর থেকে এ গ্রামে ফুল তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে গ্রামটি ফুলগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বছরে এ গ্রাম থেকে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরো এগিয়ে যাবে এ গ্রাম। প্রতিটি বাড়িতেই ফুল তৈরি হয়। কোথাও বা দলবদ্ধ হয়ে বাড়ির উঠানে আবার কোথাও গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে কাজ করেন নারীরা। এ গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার প্লাস্টিকের ফুল তৈরির সাথে জড়িত। বছর কয়েক আগেও এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই বেকার সময় পার করতেন। তবে ফুল তৈরির পর তাদের আর বেকার থাকতে হয়নি। গ্রামের গৃহবধূরা এসব ফুল তৈরি করেন। তবে ফুল তৈরির উপকরণের জোগান দিয়ে থাকেন পুরুষরাই এবং তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এ ফুল বিক্রি করে এখন অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বলা যায় এ গ্রাম থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার ফুল উৎপাদন হয়। তবে বৈশাখ মাসে বিভিন্ন মেলা হওয়ায় ফুলের চাহিদা বাড়ে। এতে তাদের বিক্রি ও আয় বাড়ে। ফুল তৈরির উপকরণ বিক্রির জন্য এ গ্রামের বাজারে দুইটি পাইকারি দোকান গড়ে উঠেছে। যেখানে ফুল তৈরির কারিগররা নগদ ও বাকিতে মালামাল কিনে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ফুল তৈরির উপকরের দাম বেড়েছে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ। ফুল তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় কারিগরদের কমেছে লাভের পরিমাণ। ফুলের কারিগর আতাউর রহমান বলেন- গত প্রায় ২০ বছর থেকে প্লাস্টিকের ফুল তৈরি করছেন। গোলাপ, শাপলা ও সূর্যমূখীসহ কয়েক ধরনের ফুল তৈরি করেন। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রামীণমেলাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্রি করেন এসব ফুল। প্রতিটি ফুল তৈরিতে খরচ পড়ে ৪-৫ টাকা। যেখানে বিক্রি হয় ৮-১০ টাকায়। প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ করেন। যা দিয়ে চলে সংসার। এসব ফুল তৈরির উপকরণ কিছু বকেয়া আবার কিছু নগদ টাকায় কেনায় হয়। পরে লাভের অংশ থেকে বকেয়া পরিশোধ করা হয় বলে জানান তিনি। আরেক কারিগর মিঠু বলেন- ফুলের ব্যবসা সারা বছর হলেও বৈশাখ মাসে জমজমাট হয়ে থাকে। কারণ এ সময় বিভিন্ন স্থানে মেলা হওয়ায় বেচাকেনাও ভালো হয়। গতবছর পলিথিন কাগজের কেজি ২০০-২২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা। ফুলের পাতা ছিল ৭০০-৮০০ টাকা কেজি। বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১২০০-১২৫০ টাকা কেজি। গুনিয়া তার ১৫০ টাকা কেজি থেকে বর্তমানে ১৮০-২০০ টাকা। ফুলের উপকরণের দাম বেড়েছে তবে ফুলের দাম আগের মতোই আছে। এ কারণে লাভ কিছুটা কমেছে। ২০ হাজার টাকার মালামাল কিনা হলে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। গৃহবধূ মেরিনা বিবি বলেন- সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ ফুল তৈরি করে বাড়তি আয় করা হয়। প্রতিদিন কাজ করে অন্তত ২০০-২৫০ টাকা আয় করা যায়। এ কাজ করে বাড়তি আয় করায় পুরুষদের থেকে হাত খরচের টাকা নিতে হয় না। যা দিয়ে নিজের খরচের পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশুনার কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ফুল তৈরির নারী কারিগর গোলেজান বিবি, সম্পা বিবি ও জবেদাসহ কয়েকজন বলেন- নারীরা ফুল তৈরির সবকিছুই করে থাকে। আর ফুল তৈরি করা হলে পুরুষরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বিক্রি করে। এ গ্রামে যখন ফুল তৈরি হতো না তখন অলস সময় বসে থাকতে। তবে ফুল তৈরির পর থেকে নারীরা আর বসে না থেকে বাড়তি আয় করছে। এতে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সবুজ জানায়- পড়াশুনার পাশাপাশি ফুল তৈরির কাজ করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করা হয়। ফুল তৈরির সময় মাকে সহযোগিতা করা হয়। তবে বিভিন্ন মেলায় যখন বাবা ফুল বিক্রি করতে যান তখন বাড়ি থেকে এসব ফুল বাবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। আবার বাড়তি আয় হলে তা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালানো হয়। পাইকারি ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন- এ গ্রামে প্রধান পেশা কৃষি হলেও এখন প্রায় সব বাড়িতেই ফুল তৈরি করে। বলা যায় এখন ফুলগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জামগ্রাম। ফুল তৈরি করে এখন অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। এ গ্রামের বাজারে দুটি দোকান থেকে প্রতিমাসে অন্তত ১০-১২ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি হয়। যা থেকে অন্তত ২৫-৩০ লাখ টাকার ফুল উৎপাদন হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত