সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতির জন্য খোদা প্রদত্ত বছরের একটি মৌসুমি ফলের মধ্যে অনেক ফলের মতো (হুট বা বাঙ্গি) বাঙ্গিও একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ও শরীরের জন্য উপকারী একটি ফল। এর চাষও কদর বিগত বছরের তুলনায় অনেক চাহিদা এখন মানুষের মধ্যে। এর নাম যাই হোক না কেন, বাঙ্গি একটি স্বাস্থ্যকর ফলও বটে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অনেক উপকারী ফল এটি। হুট বা বাঙ্গি এক রকমের শষা জাতীয় ফল। তবে বাঙ্গি শষার চেয়ে বেশ বড় হয়। কাঁচা বাঙ্গি সবুজ হয়, পাকলে সেইটি হলুদ রঙের হয়ে যায়। এর বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরাকাট খাজযুক্ত এবং ভেতরে কাটলে দেখা মিলে ফাঁকা দেখা যায়। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া ও কালোচো দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের এবার ভাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে অনেক। এছাড়া এবার বাঙ্গির চাষ হয়েছে জেলার হাইমচর উপজেলার একাধিক গ্রামে। সেখানেও হয়েছে বাম্পার ফলন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার ফলন ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। বাঙ্গি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বাঙ্গি চাষে এ বছর অনেক ঝুঁকেছে। তবে এ বছর ফলন ভালো ও বেশি হওয়ায় বাঙ্গির বাজার মূল্য বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। যার ফলে এ বছর কৃষকরা দাম পাচ্ছে না আশানুরুপ। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর এ উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে (হুট বা বাঙ্গি) বাঙ্গি চাষ করা হয়। উপজেলার দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া, রাজারগাঁও ইউনিয়নের কির্তনখোলা, কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুরা গ্রামে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ, হুট বা বাঙ্গি দৃশ্যমান হয়ে আছে। এই সবুজের মাঝে থর থরে সাজানো আছে বড় বড় বাঙ্গির অপরূপ অবস্থান। দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও জুড়িয়েও ভরে যায়। এ সব গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে কৃষক বিক্রির জন্য খেত থেকে বাঙ্গি সংগ্রহ করে, কেউ আবার বাঙ্গি খেতের পরিচর্যা করতে দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের সাথে আলাপকালে বাঙ্গি চাষি আবদুল খালেক জানান, প্রায় কানি খানিক জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছে। এতে তার প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমির বাঙ্গি সাড়ে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এবার তিনি ৪ হাজার গর্তে ১৬ হাজার চারা লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি গর্তে ৬টি করে বাঙ্গি হলেও ৯৬ হাজার বাঙ্গি বিক্রির আশা রয়েছে তার।
আরেক চাষির স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, এবার প্রায় ৩ একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি পিস বাঙ্গি পাইকারি দামে বড় হলে ৫০ টাকা আর ছোট হলে ১৫ টাকা আবার মাঝারি আকারের বাঙ্গি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রয় করা যাবে। এ বিষয়ে বাঙ্গি কিনতে আসা হাজীগঞ্জের বেপারী আব্দুল লতিফ বলেন চরপাড়া অঞ্চলের বাঙ্গি মানে অনেক ভালো। তাই তিনি এখানে বাঙ্গি কিনতে আসেন। পাইকার লতিফ বেপারী আরো জানান, তিনি কৃষকের খেত থেকে ৪০-৫০ টাকা দরে প্রতিটি বাঙ্গি কিনেছেন। খেত থেকে এনে গাড়িতে উঠানো এবং গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাজীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে বাঙ্গি প্রতি আরো প্রায় ৭-৮ টাকা খরচ রয়েছে।