‘রাতের বেলা হামার ব্যাটা হামাকি বাড়িত থ্যাকে বার করে দিছে। আর কছে এই বাড়িত যান না ফিরি। হামি আমার ব্যাটা আর ব্যাটার বউ এর কাছে বুঝা (বোঝা)। ১০ বছরের বেশি হলো হামি রাস্তাত থাকি কেউ খোঁজ ল্যায় না’। এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথা বলছিলেন বয়সের মিরজান ওরফে মীরো নামের এক বৃদ্ধা। ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে প্রায় অনেক আগেই। ১০ বছর ধরে খেয়ে-না খেয়ে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি। নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৩নং পরানপুর ইউনিয়নের চককেসব গ্রামে রাস্তার পাশের ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। ঝাঁড়ু তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলছে সংসার। কোনোদিন বিক্রি না হলে না খেয়েও দিনযাপন করতে হয় তাকে। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ছেলের বউ এর নানা কুমন্ত্রনায় ঘর ছাড়তে বাধ্য করে ছেলে আস্তান হোসেন। ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পরে বয়স্ক ভাতার টাকা জমিয়ে কিছু টিন কিনে রাস্তার পাশে কোনোভাবে বাড়ি বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। বৃদ্ধা মীরজান ওরফে মীরো বলেন, ছেলের বউ নানাভাবে অত্যাচার করত। কিন্তু ছেলে কোনো প্রতিবাদ করেনি। হঠাৎ একদিন রাতে ছেলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে- তোমার যেখানে খুশি সেখানে চলে যাও। আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না, তাই আমি বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে এখানে এসে ১০ বছর ধরে আছি। আমার অনেক বয়স হয়েছে, এই বয়সে বাইরে বের হতেও পারি না, তবুও পেটের দায়ে বের হতে হয়। ঝাঁড়ু নিয়ে পাড়ায়-মহল্লায় বিক্রি করে ২০-৫০ টাকা আয় হয়। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন চলে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দয়া করে যদি থাকার মতো জায়গা করে দিত, বাকি জীবনটা সেখানে থাকতে পারতাম। স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসাইন বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই এই বৃদ্ধা মাকে এখানে থাকার জায়গা দিয়েছি। তার জীবনে এতোই কষ্ট যে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। তার ছেলে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এটা অবশ্যই অন্যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মজিদা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ির সামনেই এক ছোট্ট ঘর। মাঝেমধ্যে তাকে খাওয়াই তবুও কষ্ট লাগে যে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বিষয়টা সত্যিই ন্যাক্করজনক। ছেলের বিচার হওয়া দরকার।