ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেনশন প্রজ্ঞাপন জারি

প্রতিবাদে মানববন্ধন ঢাবি কর্মচারীদের

প্রতিবাদে মানববন্ধন ঢাবি কর্মচারীদের

চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার বদলে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে- এ মর্মে গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

এই প্রজ্ঞাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শনের শামিল এবং ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ আখ্যা দিয়ে এর প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। প্রায় ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ কর্মচারী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।

মানববন্ধনে উপস্থিত কর্মচারীদের হাতে আউটসোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ রাখা হোক; এক দেশে দুই নীতি মানি না মানব না; স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কালো আইন চাপিয়ে দেয়া মানি না মানব না; বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই- ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে তরিকুল নামের এক কর্মচারী বলেন, আমাদের পেটে যদি ভাত না থাকে তাহলে আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমাদের পেটে কেউ লাথি দেবেন না। আশা করি আপনি আরো ২০০ বছর নেতৃত্ব দেন কিন্তু আমাদের পেটে লাথি মারবেন না।

চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, সর্বজনীন পেনশন আমরা মানি না। শেখ হাসিনা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন কিন্তু এই পেনশন আমরা তার কাছে আশা করি না।

মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এক কর্মচারী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির মেহনতি মানুষের জন্য ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে মানুষ ভাবতেন বলেই পেনশন স্কিম দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে এই পেনশন সুবিধা চালু করতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি সমিতির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই পেনশন প্রথা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ঢাবি মুখ থুবড়ে পড়বে। আমি ঢাবি উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ করব পেনশন স্কিম যাতে প্রত্যাহার করা হয়, তা না হলে আমরা আন্দোলন করব।

চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. মোবারক হোসেন বলেন, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা বসে থাকে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় সকল আন্দোলনে এগিয়ে এসেছে কিন্তু আজকে আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।

এই সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানানোর জন্য সবাই এগিয়ে আসুন।

আমরা সরকারের বিরুদ্ধে না, এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম; সেই সাথে আমাদের কর্মচারীরা পিছিয়ে নেই।

তিনি বলেন, ঢাবি একমাত্র স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেখানে সবাই অনার্স মাস্টার্স পাস করা। বিসিএসে যেখানে রেজাল্ট চাওয়া হয় ২.৫০ সেখানে আমাদের ঢাবিতে তৃতীয় শ্রেণিতে ঢুকতে হলে আমাদের রেজাল্ট চাওয়া হয় ২.৭৫।

সুতরাং, আমরা মেধার দিক দিয়ে কোনো অংশে কম না, অনেক এগিয়ে। আমাদের পে স্কেল চালু না করে উল্টো আমাদের মারার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জাতির পিতার অনেক আন্দোলনের একটি ছিল এই পেনশন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আপনি এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত