রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’

* রাত হলে চলে আটক বাণিজ্য, জব্দকৃত ইয়াবা নয়ছয়ের অভিযোগ * পুলিশি সহযোগিতায় দেদারসে পাচার হচ্ছে মিয়ানমারের গরু-সিগারেট * পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে হয়রানি, অর্থ আদায়

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারের রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ানের আশকারায় গড়ে উঠেছে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কাওসার ও মো. আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’। এই টিমের সব কিছুই দেখভাল করেন ওসির আস্তাভাজন এসআই মো. আল আমিন। এ ছাড়া এই টিমে রয়েছে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ ইমরান উদ্দিন, কনস্টেবল মো. আহসান হাবীব, পিপল দেব (মুন্সী), রাকিব হোসেন, মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. মাহমুদ ও মো. আবু বক্কর। তাদের ছত্রছায়ায় পুরো রামু উপজেলাজুড়ে চলছে নানা অপরাধ। এই সিভিল টিমের সহযোগিতায় রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা, গরু, সিগারেট পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি রাতে মাটি পাচারেও সহযোগিতা করে আসছে এই সিভিল টিম।

এছাড়া এই টিমের লোকজনের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ লোকজন ধরে থানায় এনে ছেড়ে দেয়া এবং জব্দকৃত ইয়াবাও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে এই টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্লিষ্টার অভিযোগ এনে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, খোদ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার মাঠপর্যায়ের লোকজন এসআই আল আমিনের বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্লিষ্টার অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। পুলিশের প্রকাশ্যে এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সচেতন মহলসহ খোদ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও অতিষ্ঠ।

অভিযোগে প্রকাশ, ওসির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এসআই কাওসার ও এসআই আল আমিন। তাদের উপস্থিতিতে গরুসহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, এরই মধ্যে এসআই আল আমিন বান্দরবনের ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়িতে চাকরি করার সুবাধে নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া উপজেলার মাদক ব্যবসায়ীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, দুই দফা ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়িতে চাকরিকালীন সময়েও তার বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্লিষ্টার অভিযোগ ছিল। ওই সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় তার কর্মস্থল হলেও প্রায় সময় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বালুখালী টিভি টাওয়ার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ইয়াবা উদ্ধারের নামে হয়রানির অভিযোগ ছিল।

গত কয়েক দিনে রামু উপজেলায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাওসার ও মো. আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’ রয়েছে। দিনের বেলায় ওই টিমের সদস্যরা অনেকটা ‘রুমবন্ধি’ থাকেন। সন্ধ্যা হলেই সাদা পোশাকে নেমে পড়েন রামুর কয়েকটি পয়েন্টে। বিশেষ করে প্রতি সোমণ্ডবৃহস্পতিবার সপ্তাহিক গরুর হাট। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রবেশদ্বারসহ (চা বাগান) কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গরু বহনকারী যানবাহন আটকিয়ে টাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এছাড়া মিয়ানমারের সিগারেট পাচারে সহযোগিতা করে আসছে এই সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, রাতভর পুরো উপজেলা থেকে ১০ থেকে ১২ মাটিবোঝাই ডাম্পার ট্রাক আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সকাল গড়াতেই দেনদরবারে ছাড়া পায় এসব ডাম্পার। অন্যদিকে রামু মরিচ্যা সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ইয়াবা উদ্ধারের নামে হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে এই সিভিল টিমের বিরুদ্ধে। গত ১৯ এপ্রিল মরিচ্যা সড়কের ঢালারমুখ এলাকা থেকে সিএনজির যাত্রী উখিয়ার নুরুল আবছারকে ইয়াবাসহ আটক করে। পরে থানায় এনে তাকে মোট অংকের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে গত ২০ এপ্রিল রামুণ্ডমরিচ্যা সড়কের পূর্ব রাজারকুল ব্রিজের উপর (কক্সবাজার থ১১-৭৩৯৪) গাড়ির যাত্রী আবু ছৈয়দকে ইয়াবাসহ আটক করে। তাকেও থানায় এনে দেনদরবারে ছেড়ে দেয়া হয়। এ রকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে সিভিল টিমের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময় জব্দকৃত ইয়াবা ও আরো অন্য বাহিনীর দেয়া মামলার ইয়াবা রামুর মন্ডল পাড়া এলাকার ‘শাকিল’ নামের একজনকে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। থানার জব্দকৃত ইয়াবা নয়ছয় করার সহযোগিতা করে আসছে থানার মালখানার দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ ইমরান উদ্দিন। ওসির আর্শিবাদে থানার মালখানার দায়িত্ব নেয়ার আড়াইমাসে এসআই মুহাম্মদ ইমরান উদ্দিনের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। আড়াইমাসে তিনটি মোটরসাইকেল বাইক ক্রয় করেছেন তিনি। অন্যদিকে সিভিল টিমের সদস্য কনস্টেবল মো. আহসান হাবীব, পিপল দেব (মুন্সী), রাকিব হোসেন, মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. মাহমুদ ও মো. আবু বক্কবের জীবন যাপনও অন্যরকম। নতুন ভার্সনের মোটর বাইক বাজারে আসলে প্রথমে তারাই কিনেন। তাদের জীবন যাপন দেখে থানার অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মাইষকুম ব্রিজ আর রামু চা-বাগান নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়ার রাস্তার মাথায় প্রতি সোমবার আর বৃহস্পতিবারে প্রকাশ্যে গরু বহনকারী মিনি ট্রাক হতে প্রতি গরু হিসাবে টাকা উত্তোলন করে। আর প্রতিদিন রাতে গরু গর্জনিয়া হইতে রামু বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সময় গরু পাচারকারীকে রোড ক্লিয়ার দেয় ওসির বিশ্বস্ত লোক কনস্টেবল মো. আবু বক্কর। মইষকুম এলাকা হতে নদী পথে মনিরঝিল এলাকার পাহাড়ে দিনের বেলায় গরু রাখে এবং ওসির নির্দেশনা আর সময় মতো গরু বাহির করে। যেদিন বেশি গরু রামু থেকে পাচার হয়, তখন ওসি নিজেই গরুগুলো রামু থানা এলাকার বাহিরে না যাওয়া পযন্ত বাহিরে থাকেন। যাতে ডিউটিরত কোনো অফিসার ওই গরু আটক করতে না পারে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, থানার পাশে ‘কলি স্টোর’ নামের একটি বিকাশের দোকান রয়েছে।