বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পোশাকশিল্পে সংকট বাড়ার শঙ্কা
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে তীব্র ভূ-রাজনৈতিক সংকট এবং এর প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রভাবে পোশাকশিল্প এমনিতে এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন প্রজ্ঞাপন দুটিতে পোশাক শিল্পের সংকটকে আরো তীব্রতর করবে, শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। উদ্যোক্তারা নতুন কারখানা গড়ে তুলতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল বা সরকার নির্ধারিত অঞ্চলের বাইরে প্রতিষ্ঠিত পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলোরই সম্প্রসারণ কাজ চলছে, আবার নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের কাজও চলমান রয়েছে। তাই পোশাকশিল্পে এ মুহূর্তে সার্কুলার দুটি কার্যকর করা হলে বিদ্যমান শিল্পকারখানার সম্প্রসারণ/নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠার চলমান কার্যক্রমগুলো ব্যাহত হবে। তৈরি পোশাকশিল্পের সমসাময়িক ইস্যুগুলো নিয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ এক বৈঠক করেছেন।
সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান (কচি)। আলোচনায় অংশ নেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মুনির হোসেন, বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মো. নাসির উদ্দিন এবং বিজিএমইএ’র পরিচালকগণ।
বৈঠকে পোশাকশিল্পের বিভিন্ন বিষয়গুলো, বিশেষ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত ইকোনমিক জোন বা সরকার কর্তৃক নির্মাণ করা হলে বিদ্যুৎসযোগ নির্ধারিত শিল্প এলাকা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গ্যাস সরবরাহ না দেওয়া এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দেওয়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দুটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত পোশাকশিল্পকে বাধাগ্রস্ত করা কোনোমতেই কাম্য নয়। আলোচিত সার্কুলার দুটি থেকে পোশাক শিল্পকে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে পোশাকশিল্পে শুল্ক, ভ্যাট, আয়কর-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিল্পকে টেকসই করতে ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখতে ও ২০৩০ সাল থেকে পোশাক খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এনবিআর ও কাস্টমস বন্ড-সংক্রান্ত ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোকে আরো দ্রুততর, সহজতর ও হয়রানিমুক্ত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে শিল্পোদ্যোক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে পোশাকশিল্পের ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পে প্রযোজ্য উেস কর ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণসহ পোশাকশিল্পের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে ব্যয় কমানো হলে শিল্প প্রতিযোগী সক্ষমতা বজায় রাখতে সমর্থ হবে। তারা আশা করেন, আসন্ন বাজেটে এসবের প্রতিফলন ঘটবে।